spot_img
22 C
Kolkata
Saturday, November 15, 2025
spot_img

SIR–আধার নিয়ে মঙ্গলে সুপ্রিম কোর্টের রায়, কিন্তু বিহারে কার্যকর নয় — ভোট ঘোষণা আগেই করল নির্বাচন কমিশন !

কলকাতা টাইমস নিউজ  :নিজস্ব সংবাদদাতা :নয়াদিল্লি  ,০৭ অক্টোবর  :

কদিকে যখন দেশজুড়ে নজর সুপ্রিম কোর্টের রায়ের দিকে — ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনী (Special Intensive Revision বা SIR) এবং আধার কার্ড (Aadhaar)–এর সংযুক্তিকরণ সংক্রান্ত সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে — ঠিক সেই সময়ই নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করে দিল বিহার বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট।

ফলে মঙ্গলবার শীর্ষ আদালত এই বিষয়ে যাই রায় দিক না কেন, বিহারে তার কোনও কার্যকর প্রভাব পড়বে না, এমনটাই স্পষ্ট হয়ে গেল সংবিধানের বিধান অনুযায়ী।

সোমবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, দুই দফায় ভোটগ্রহণ হবে ৬ ও ১১ নভেম্বর, আর গণনা হবে ১৪ নভেম্বর।
প্রথম দফার ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি হবে আগামী ১০ অক্টোবর (শুক্রবার)।
এই ঘোষণার মাধ্যমেই বিহার রাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করেছে।

সংবিধানের ৩২৯ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, একবার ভোটের তফসিল ঘোষণা হয়ে গেলে আদালত কোনওভাবেই সেই প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
ফলে ভোটার তালিকা সংশোধন বা আধার সংযুক্তি নিয়ে যত বিতর্কই থাকুক না কেন, বিহারের নির্বাচনী প্রক্রিয়া আর আদালতের আওতায় থাকবে না।

অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মনে করছেন, ঠিক এই সাংবিধানিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই নির্বাচন কমিশন রায় ঘোষণার একদিন আগে ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করেছে — যেন কোনও রায়ের প্রভাব এ রাজ্যের ভোটে না পড়ে।

গত কয়েক মাস ধরেই বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে।
বিভিন্ন সংগঠন ও নাগরিকেরা আদালতে অভিযোগ জানান— ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে নাগরিকত্ব যাচাইয়ের প্রশ্নে আধার কার্ড ব্যবহারে বৈষম্য ও অস্পষ্টতা রয়েছে।

এই মামলাগুলির শুনানির সময় বিচারপতি সূর্যকান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ গত মাসে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন—

“ভোটার তালিকা সংশোধনে কোনও অনিয়ম আমাদের নজরে এলে, আমরা গোটা দেশের SIR প্রক্রিয়াই বাতিল করতে পারি।”

সেই মামলারই চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করার কথা মঙ্গলবার।
তবে এখন প্রশ্ন উঠেছে— রায় যা-ই হোক না কেন, বিহারে সেটি প্রযোজ্য হবে না, কারণ ভোট ঘোষণা হয়ে গিয়েছে।

বিহারে নির্বাচন কমিশনের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আধার কার্ডকে ভোটার তালিকার সংশোধনের সময় ১২তম সহায়ক নথি হিসেবে ধরা হবে, তবে নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে নয়।

সুপ্রিম কোর্টের আগের নির্দেশে স্পষ্ট বলা হয়েছিল—

“আধার কার্ড কখনও নাগরিকত্বের প্রমাণ হতে পারে না, তবে ভোটার তালিকায় নাম যুক্ত করতে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।”

গত সপ্তাহান্তে পাটনায় কমিশনের পূর্ণাঙ্গ বৈঠকে যোগ দেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার, তাঁর সঙ্গে ছিলেন দুই সহকারী কমিশনার।
বিহার প্রশাসনের সঙ্গে দুই দিন ধরে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন,

“আধার আইন অনুযায়ী এটি নাগরিকত্ব বা বয়সের প্রমাণ নয়। এমনকি স্থায়ী ঠিকানারও চূড়ান্ত প্রমাণ নয়। শুধুমাত্র এটুকু বলা যায়— আধার কার্ডধারী ব্যক্তি ভারতের একজন বাসিন্দা।”

তিনি আরও জানান,

“সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শুধুমাত্র বিহারের ক্ষেত্রেই আধার কার্ডকে অতিরিক্ত নথি হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
অন্য কোনও রাজ্যে আমরা এই নিয়ম প্রযোজ্য করছি না।”

বিহারে SIR প্রক্রিয়া চলাকালীন অভিযোগ ওঠে— অনেক ভোটারের নাম বাদ যাচ্ছে, আবার অনেকের নাগরিকত্ব যাচাই নিয়ে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে।
অভিযোগকারীদের দাবি, আধার কার্ডকে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করলে নাগরিকত্ব নয়, বরং বাসিন্দা হওয়ার প্রমাণই কেবল প্রতিষ্ঠিত হয়, যা সংবিধানের ভোটাধিকার নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

অন্যদিকে, কমিশনের দাবি— এই প্রক্রিয়ার মূল লক্ষ্য ভোটার তালিকা বিশুদ্ধ করা, যাতে ভুয়ো ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া যায় এবং প্রকৃত নাগরিকরা ভোট দিতে পারেন।

সুতরাং মঙ্গলবারের সুপ্রিম কোর্টের রায় যতই তাৎপর্যপূর্ণ হোক না কেন, বিহারে আপাতত তা কার্যকর হবে না।
ভোটার তালিকার বিতর্ক, আধার সংক্রান্ত প্রশ্ন, সাংবিধানিক জটিলতা— সব কিছুর মধ্যেই এখন বিহার রাজনীতি প্রবেশ করছে ভোটযুদ্ধের পর্বে।

এখন দেখার বিষয়, আদালতের রায় পরবর্তী রাজ্যগুলিতে SIR প্রক্রিয়া ও আধার সংযুক্তি নিয়ে কী প্রভাব ফেলে, আর নির্বাচন কমিশন কীভাবে সেই নির্দেশ বাস্তবায়ন করে।

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,800SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles

Enable Notifications Thank You No thanks