কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব সংবাদদাতা :কলকাতা ,১২ অক্টোবর :
পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরে এক ভয়াবহ ঘটনার সাক্ষী হল রাজ্য। শুক্রবার রাতে ওড়িশা থেকে আগত এক দ্বিতীয় বর্ষের মেডিক্যাল ছাত্রী allegedly তিনজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির হাতে গণধর্ষণের শিকার হন। ঘটনাটি সামনে আসতেই উত্তেজনা ছড়িয়েছে রাজ্যজুড়ে। তদন্তে নেমেছে পুলিশ, পাশাপাশি নড়েচড়ে বসেছে জাতীয় মহিলা কমিশনও (NCW)।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওড়িশার জালেশ্বর এলাকার ওই ছাত্রী দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। শুক্রবার রাতে তিনি তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে খাবার খেতে বেরিয়েছিলেন। রাত প্রায় ৮টা ৩০ মিনিট নাগাদ তারা বাইরে যান।
তদন্তকারীদের দাবি, কিছুক্ষণ পর তাঁর বন্ধু কোনও কারণে সেখান থেকে চলে যান। সেই সময় তিনজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি সেখানে এসে মেয়েটির মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় ও জোর করে কলেজের বাইরে জঙ্গল এলাকায় টেনে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে।
এক পুলিশ আধিকারিক জানান,
“তাকে ভয় দেখানো হয়েছিল, যাতে সে কাউকে কিছু না বলে। পরে তাঁরা ফোন ফেরত দেওয়ার নাম করে টাকার দাবিও করে।”
শনিবার সকালে খবর পেয়ে ওই ছাত্রীর বাবা-মা ওড়িশা থেকে দুর্গাপুরে আসেন এবং থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
মেয়ের বাবা সাংবাদিকদের বলেন,
“আমরা এই কলেজকে ভাল মনে করেছিলাম বলেই মেয়েকে এখানে পড়তে পাঠিয়েছিলাম। এমন লজ্জাজনক ঘটনা ঘটবে ভাবতেই পারছি না।”
ছাত্রীর মা কাঁদতে কাঁদতে জানান,
“রাত ১০টার পর এই ঘটনা ঘটে। মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার করা হয়েছে। আমরা শুধু চাই, ও যেন ন্যায় পায়।”
দুর্গাপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে, ছাত্রীর বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে।
এক আধিকারিক বলেন,
“আমরা ছাত্রীটির বন্ধুর সঙ্গেও কথা বলেছি। আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। ফরেনসিক দল ঘটনাস্থলে গিয়েছে প্রমাণ সংগ্রহ করতে।”
এছাড়াও, জঙ্গল এলাকাটি কর্ডন করে রাখা হয়েছে এবং সন্দেহভাজনদের খুঁজে বের করতে একাধিক টিম গঠন করা হয়েছে।
এই ঘটনায় জাতীয় মহিলা কমিশন (NCW) গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদার বলেন,
“পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ বেড়েই চলেছে। পুলিশ প্রশাসন যথেষ্ট সক্রিয় নয়। মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করব — এ ধরনের অপরাধ রুখতে যৌথভাবে কাজ করুন।”
এছাড়াও রাজ্যের মহিলা কমিশন এবং স্বাস্থ্য দফতর থেকে ঘটনাটির রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন,
“কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে দ্রুত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কলেজ প্রশাসন এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে জানিয়েছে যে তারা পুলিশের সঙ্গে পুরোপুরি সহযোগিতা করছে। পাশাপাশি, আক্রান্ত ছাত্রী ও তাঁর সহপাঠীদের মানসিকভাবে সহায়তা করতে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ঘটনার প্রতিবাদে দুর্গাপুর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় একাধিক ছাত্র সংগঠন মিছিল ও বিক্ষোভে নেমেছে। তাদের দাবি —
“অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে এবং কলেজ ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।”
অ্যাক্টিভিস্টদের একাংশ বলেছেন, ছোট শহর ও শিল্পাঞ্চল এলাকাগুলিতে কলেজ ক্যাম্পাসের আশপাশে পর্যাপ্ত আলো, সিসিটিভি ও পেট্রোলিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় এমন ঘটনা বাড়ছে।
আক্রান্ত মেডিক্যাল ছাত্রী বর্তমানে স্থানীয় এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। চিকিৎসক সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। মনস্তাত্ত্বিক ট্রমা কাটিয়ে উঠতে তাঁর পাশে রয়েছেন একদল বিশেষজ্ঞ কাউন্সেলর।
এই ঘটনা আবারও সামনে এনে দিয়েছে কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা প্রশ্নকে। দুর্গাপুরের মতো শিল্পশহরে যেখানে হাজার হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতে আসে, সেখানে যদি মেয়েরা রাতের অন্ধকারে নিরাপদ না থাকে, তবে প্রশাসনের দায় এড়ানো যায় না— এমনটাই বলছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
রইলো আমাদের তরফে সহায়তার বার্তা :
এমন এক ঘটনা অবশই সমাজে নিন্দনীয় ,গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রাখা হলো -যদি কেউ যৌন হেনস্থা বা হামলার শিকার হন, দয়া করে সাহায্য চাইতে দ্বিধা করবেন না।
আপনি একা নন।
📞 মহিলা হেল্পলাইন (২৪x৭): ১০৯১
📞 জাতীয় মহিলা হেল্পলাইন: ১৮১
📞 কলকাতা পুলিশ মহিলা হেল্পলাইন: (০৩৩) ২২১৪ ৩০২৪ / ২২১৪ ১৩১০
📞 পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশন: (০৩৩) ২৩২১ ৪০৫৫
📞 চাইল্ডলাইন (অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য): ১০৯৮
প্রশিক্ষিত কাউন্সেলর ও আধিকারিকরা গোপনীয়ভাবে পরামর্শ, সহায়তা ও সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে প্রস্তুত আছেন। সাহায্যের আবেদন করাই নিরাপত্তা ও পুনরুদ্ধারের প্রথম পদক্ষেপ।




