কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব সংবাদদাতা :কলকাতা ,১২ অক্টোবর :
“ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের পক্ষপাতদুষ্টতা আজও শেষ হয়নি” — হরিয়ানার মৃত IPS-এর স্ত্রীর উদ্দেশে সোনিয়া গান্ধীর আবেগঘন চিঠি, তোলপাড় রাজনৈতিক মহল !
হরিয়ানার সিনিয়র আইপিএস অফিসার ওয়াই পূরণ কুমারের রহস্যমৃত্যু ঘিরে রাজ্য রাজনীতি ইতিমধ্যেই উত্তপ্ত। এবার সেই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানালেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেত্রী সোনিয়া গান্ধী। শনিবার এক আবেগঘন চিঠিতে তিনি প্রয়াত অফিসারের স্ত্রী, হরিয়ানার আইএএস আধিকারিক অনমিত পি কুমারকে সমবেদনা জানান। শুধু সমবেদনা নয়, চিঠিতে তিনি সরাসরি ইঙ্গিত করেছেন প্রশাসনিক কাঠামোর ভেতরে লুকিয়ে থাকা “ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের পক্ষপাতদুষ্টতা” সম্পর্কেও।
চিঠির শুরুতেই সোনিয়া লিখেছেন,
“সিনিয়র আইপিএস অফিসার এবং আপনার স্বামী ওয়াই পূরণ কুমারের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরে আমি হতবাক ও গভীরভাবে শোকাহত। এই কঠিন সময়ে আপনার ও আপনার পরিবারের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা রইল।”
গত ৭ অক্টোবর চণ্ডীগড়ের সেক্টর ১১-এর এক বাড়ির বেসমেন্ট থেকে হরিয়ানার অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (ADGP) ওয়াই পূরণ কুমারের গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, তিনি নিজের সার্ভিস রিভলভার দিয়ে আত্মঘাতী হন। তবে ঘটনাটি ঘিরে উঠে এসেছে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ।
মৃত অফিসারের স্ত্রী, আইএএস অনমিত পি কুমার সরাসরি অভিযোগ করেছেন — তাঁর স্বামীকে জাতপাতের নামে অপমান, মানসিক হেনস্থা ও আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে। এমনকি, আত্মঘাতী অফিসারের পকেট থেকে উদ্ধার হওয়া একটি নোটেও এই জাতিভিত্তিক বৈষম্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ ছিল বলে জানা গেছে।
চিঠির একাংশে সোনিয়া গান্ধী লেখেন,
“ওয়াই পূরণ কুমারের মৃত্যু আমাদের মনে করিয়ে দেবে যে আজও ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের পক্ষপাতদুষ্ট মনোভাব সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিকও যখন সামাজিক ন্যায় থেকে বঞ্চিত হন, তখন তা গোটা ব্যবস্থার উপর প্রশ্ন তোলে।”
তিনি আরও লেখেন,
“আমি এবং দেশের লক্ষ লক্ষ নাগরিক আপনার সঙ্গে আছি এই ন্যায়বিচারের সংগ্রামে। ঈশ্বর যেন আপনাকে এই কঠিন সময়ে শক্তি ও সাহস দান করেন।”
এই ঘটনার পর শুধু সোনিয়া নন, বহু রাজনৈতিক নেতা মুখ খুলেছেন। উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতী এক্স হ্যান্ডলে একটি পোস্টে লিখেছেন,
“একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসারকে যদি জাতের নামে হেনস্থা সহ্য করতে হয়, তাহলে তা ভারতের প্রশাসনিক কাঠামোর জন্য লজ্জাজনক। এটি জাতিভিত্তিক বৈষম্যের জ্বলন্ত উদাহরণ।”
তিনি এই ঘটনাকে “জাতীয় লজ্জা” বলে উল্লেখ করেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানান।
পূরণ কুমারের স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে চণ্ডীগড় পুলিশ ইতিমধ্যেই হরিয়ানার ডিজি, রোহতকের এসপি-সহ মোট ১৫ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে। জানা গিয়েছে, অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন আইএএস ও আইপিএস আধিকারিকও। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রাথমিকভাবে “প্ররোচনা ও জাতিগত বৈষম্য”-এর ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
তদন্তে ইতিমধ্যেই কয়েকজন আধিকারিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সূত্রের দাবি, প্রয়াত অফিসারের আত্মহত্যার আগে করা অভিযোগনামা ও তার হস্তলিখিত নোট দু’টিই তদন্তের মূল সূত্র হিসেবে বিবেচনা করছে পুলিশ।
ওয়াই পূরণ কুমারের মৃত্যু কেবল একটি ব্যক্তিগত বা প্রশাসনিক ট্র্যাজেডি নয় — বরং সমাজে গভীরভাবে প্রোথিত বৈষম্য ও ক্ষমতার অসাম্যের প্রতীক হিসেবেই দেখছেন অনেকেই।
কংগ্রেস সূত্রে জানা গেছে, সোনিয়া গান্ধীর এই চিঠি শুধু সহানুভূতির প্রকাশ নয়, বরং এক রাজনৈতিক বার্তাও — যেখানে তিনি প্রশাসনের নিরপেক্ষতার প্রশ্নে সরাসরি সরকারের নীতির সমালোচনা করেছেন।
ওয়াই পূরণ কুমারের মৃত্যু ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ যেমন বাড়ছে, তেমনই প্রশাসনিক দিক থেকেও বাড়ছে তদন্তের চাপ। একদিকে মৃত অফিসারের পরিবারের ন্যায়বিচারের দাবি, অন্যদিকে বিরোধীদের অভিযোগ—এই দুইয়ের মাঝে প্রশ্ন একটাই, একজন সৎ আধিকারিকের জীবনের বিনিময়ে কি আবারও প্রমাণিত হচ্ছে ক্ষমতা ও জাতপাতের অসম সম্পর্ক?






