কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব সংবাদদাতা :কলকাতা ,১৩ অক্টোবর :
বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে অবশেষে জোটের অঙ্কে চূড়ান্ত সুর বেঁধে ফেলল ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ)। রবিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান ঘোষণা করলেন, বিজেপি (BJP) এবং জনতা দল (ইউনাইটেড) বা জেডিইউ (JDU) — দুই প্রধান শরিক দলই এবার ১০১টি করে আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।
ধর্মেন্দ্র প্রধান, যিনি এনডিএ-র বিহার নির্বাচনের দায়িত্বে রয়েছেন, জানিয়েছেন— আসন বণ্টনের এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়েছে সৌহার্দ্যের পরিবেশে, এবং জোটের সব শরিকই এতে সন্তুষ্ট।
তিনি এক্স (X)-এ পোস্ট করে লিখেছেন, “বিহারে এনডিএ-র সব সহযোগী দলের মধ্যে সৌহার্দ্যের পরিবেশে আসন বণ্টন সম্পন্ন হয়েছে। সকলেই এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। বিহার প্রস্তুত, এনডিএ-র সরকার আবারও গঠিত হবে।”
শরিক দলগুলির ভাগাভাগি
চূড়ান্ত চুক্তি অনুযায়ী—
-
বিজেপি (BJP): ১০১ আসন
-
জেডিইউ (JDU): ১০১ আসন
-
লোক জনশক্তি পার্টি (রাম বিলাস) বা এলজেপি (আরভি): ২৯ আসন
-
রাষ্ট্রীয় লোক মরচা (RLM): ৬ আসন
-
হিন্দুস্তানি আওয়াম মরচা (HAM): ৬ আসন
ধর্মেন্দ্র প্রধানের এই ঘোষণার মাধ্যমে এনডিএ-র শরিকদের মধ্যে আসন বণ্টন নিয়ে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা আপাতত মিটে গেল।
এনডিএ-র ছোট শরিক হিন্দুস্তানি আওয়াম মরচা (HAM)-র নেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জিতন রাম মাঁঝি শুরুতে বরাদ্দ আসনের সংখ্যা নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন। তাঁর দল অন্তত ১৫টি আসনের দাবি জানালেও প্রথম দফায় তা মানা হয়নি।
তবে শেষপর্যন্ত আলোচনার মাধ্যমে ছ’টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সমঝোতা হয় এবং ভবিষ্যতে একটি বিধান পরিষদের আসন (MLC seat) দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।
মাঁঝি জানিয়েছেন, “আমরা দাবি নয়, অনুরোধ করেছিলাম— আমাদের সম্মানজনক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হোক। এখন সেই সম্মান আমরা পেয়েছি।” এরপর তিনি পাটনার উদ্দেশে রওনা হন।
অন্যদিকে বিরোধী INDIA জোট, যার মূল লক্ষ্য মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানো, এখনো আসন বণ্টন ঘোষণা করতে পারেনি।
আরজেডি (RJD) বিধায়ক ভাই বীরেন্দ্র জানিয়েছেন, “জোটের প্রতিটি দলের আসন সংখ্যা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে, সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে আমরা তা ঘোষণা করব।”
তবে কংগ্রেস ও আরজেডি-র মধ্যে কিছু মতভেদ এখনো রয়ে গেছে বলে সূত্রের খবর। এর মধ্যেই একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে— বিমানে বসে লালুপ্রসাদ যাদব, তেজস্বী যাদব এবং কংগ্রেস নেতা অখিলেশ প্রসাদ সিং একসঙ্গে আলাপ করছেন। ছবিটি নিয়ে জল্পনা শুরু হলেও, আরজেডি সূত্রে দাবি করা হয়েছে— “সব ঠিক আছে, জোটে কোনও ভাঙন নেই।”
এনডিএ-র এই চূড়ান্ত আসন বণ্টনের সঙ্গে সঙ্গে বিহার রাজনীতিতে নতুন গতি এসেছে। দুই দফায় অনুষ্ঠিত হতে চলা এই বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে ইতিমধ্যেই রাজ্যজুড়ে উত্তাপ বাড়ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিজেপি ও জেডিইউ-র ১০১-১০১ আসনে সমঝোতা দেখাচ্ছে যে নীতীশ-প্রধানের জোট আপাতত স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। তবে, স্থানীয় স্তরে বহু জায়গায় দলীয় কর্মীদের মধ্যে সমন্বয়ের সমস্যা দেখা দিতে পারে— বিশেষ করে যেখানে উভয় দলের প্রার্থী একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান।
ধর্মেন্দ্র প্রধানের মন্তব্য, “বিহার উন্নয়নের পথে এগোচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে আমরা গরিব, যুবক, কৃষক ও মহিলাদের স্বার্থে কাজ করছি। জনগণ আবারও এনডিএ-কে ক্ষমতায় আনবে।”
বিরোধীরা অবশ্য বলছে, আসন বণ্টনের সমঝোতার আড়ালে জোটে ‘অভ্যন্তরীণ চাপা অসন্তোষ’ লুকিয়ে আছে, যা ভোটের সময় প্রকাশ পেতে পারে।
অবশেষে বিহার নির্বাচনের আগে আসন বণ্টনের অনিশ্চয়তার অবসান ঘটল এনডিএ-শিবিরে। এখন নজর বিরোধী INDIA জোটের দিকে — তারাও কবে আসন বণ্টন ঘোষণা করে, সেটাই দেখার বিষয়।




