কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব সংবাদদাতা :নায়দিলি : ,১৩ অক্টোবর :
“শান্তিতে না মিললে অন্য পথও আছে” — দিল্লি থেকে পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিলেন তালিবান বিদেশমন্ত্রী মুত্তাকি, সীমান্তে সংঘর্ষের অভিযোগ !
ভারত সফরে থাকা আফগানিস্তানের তালিবান সরকারে বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি শনিবার দিল্লিতে কঠোর ভাষায় পাকিস্তানকে সতর্ক করেছেন— শান্তিপূর্ণ সমাধান না হলে আফগানিস্তান “অন্য পথ” অবলম্বন করতে বাধ্য হবে। এই মন্তব্য পাকিস্তানের সঙ্গে কয়েক দিন ধরে উত্তেজনার উত্তরে করা হয়েছে; গত বৃহস্পতিবার কাবুলে আকাশপথে হামলার অভিযোগ উঠার পর তালিবান দাবি করেছে, তাদের প্রতিশোধ হিসেবে সীমান্তে আঘাত করা হয়েছে এবং শনিবার পাক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে হামলায় ৫৮ জন জওয়ান নিহত হয়েছে বলে কাবুল জানিয়েছে।
মুত্তাকি দিল্লিতে এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “আলোচনা ও বোঝাপড়ার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করতে চাই আমরা। কিন্তু যদি তারা (পাকিস্তান) শান্তিপূর্ণ পথে কাজ না করে, তাহলে আমাদেরও অন্য বিকল্প আছে—আমরা আমাদের সীমান্ত ও জনগণকে রক্ষা করব।” তিনি একথা জোর দিয়ে বলেন যে আফগানিস্তান “কেউ উত্তেজনা চাই না” — তবে প্রয়োজন পড়লে প্রতিকারও নেওয়া হবে।
ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে বৃহস্পতিবার কাবুলে আকাশপথে হামলার অভিযোগ তুলে। কাবুলের দাবি, ওই ঘটনায় তাদের সার্বভৌমত্বে আঘাত হয়েছে; ওইকেই কেন্দ্র করে শনিবার তালিবান সীমান্ত এলাকায় পাল্টা হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে কাবুল। মুত্তাকি সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, পাকিস্তানের “নির্দিষ্ট কিছু অংশ” পরিস্থিতি উসকে দিচ্ছে—যা থেকে বোঝানো হচ্ছে তথাকথিত তৎপর অংশটি দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী বা গোষ্ঠীগুলোকে ইঙ্গিত করে। তিনি স্পষ্ট করে জানান, পাকিস্তানের সাধারণ জনগণ ও সরকারটির বড় অংশের সঙ্গে আফগানিস্তানের সুসম্পর্ক বজায় আছে; সমস্যা মূলত “নির্দিষ্ট অংশ” বা শক্তি-গোষ্ঠীর কারণে।
তালিবান মুখপাত্র জবিহুল্লাহ মুজাহিদ এক বিবৃতিতে আরও বলেন, আইএসের (আইসলামিক স্টেট) কিছু গুরুত্বপূর্ণ সদস্য পাকিস্তানের মাটিতে লুকিয়ে আছে এবং তাদের আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে; এদের পাকিস্তান থেকে আমাদের হাতে তুলে দিতে বলেছে তালিবান। মুজাহিদ অভিযোগ করেন, আইএস সংগঠন পাকিস্তান সীমান্তবর্তী অঞ্চলে নতুন ঘাঁটি তৈরি করেছে এবং করাচি-ইসলামাবাদের মাধ্যমে তাদের প্রশিক্ষণ ও ঢোকানো হচ্ছে।
মুত্তাকি উল্লেখ করেছেন যে মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার ও সৌদি আরব যুদ্ধবিরতির জন্য আহ্বান জানিয়েছে এবং তালিবান তা মেনে হামলা বন্ধ করেছে। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেন, “আফগানিস্তান নিজেদের জনগণ ও সীমান্ত রক্ষায় বদ্ধপরিকর”—কাওকে চরম আক্রমণ করে বসতে দিলে তাদেরও প্রতিক্রিয়া নেয়ার অধিকার রয়েছে।
এমন সময় যখন আফগানিস্তানে তালিবানের শাসন ও তাদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নিয়ে বিশ্বের নানা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু, সীমান্ত-সংঘর্ষ ও তালিবানের এই রূঢ় হুঁশিয়ারি অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ জাগিয়েছে। পাকিস্তান-আফগান সীমান্ত অঞ্চলের স্থিতিশীলতা জাতিগত, নিরাপত্তা ও মানবিক দিক থেকে অত্যন্ত সংবেদনশীল। দ্বিপক্ষীয় সংঘাতে স্থানীয় সংবাদ-সূত্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করলে আশপাশের অঞ্চলেও প্রভাব পড়তে পারে—পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ উদ্বেগ হওয়া উচিত উভয় দেশের শরণার্থী-প্রবাহ, সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যাঘাত ও অঞ্চলীয় কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি।
আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের একটি অংশ মনে করছেন, এই অভিযোগ-প্রত্যাঘাত প্রক্রিয়ার মধ্যে কাতার ও সৌদি আরবের মতো মধ্যস্থতাকারীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে—তারা যদি দুই পক্ষের চাপে নাড়াচাড়া করতে পারে, তবে উত্তেজনা কিছুটা কমে আসবে। তবে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া ও প্রমাণ-প্রমাণিত বিবৃতি না এলে পরিস্থিতির সত্যকার মাত্রা নিরূপণ কঠিন।
বিশ্লেষকরা বলছেন— মুত্তাকির মন্তব্যে কেবল সামরিক হুমকি নয়, সেখানে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক ইঙ্গিতও রয়েছে। তিনি বারবার জোর দেন যে আফগানিস্তান “আলোচনা পন্থা” পছন্দ করে; তবু “নির্দিষ্ট অংশ” যদি অশান্তি ঘটাতে থাকে, তাহলে আফগান পক্ষ তাদের স্বার্থ, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সক্রিয় হতে বাধ্য হবে।
এছাড়া আফগান বিদেশমন্ত্রীর দিল্লি সফরকে কাবুলের আন্তর্জাতিক সংযোগ পুনরুদ্ধারের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে—ভারত সফর, বৈঠক ও কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে আফগান নেতৃত্ব চেষ্টা করছে অঞ্চলীয় সম্পর্ক টেকসই করার; কিন্তু একই সঙ্গে সীমান্তে কার্যকলাপ নিয়ে সরাসরি সতর্কবার্তা পাঠানোও তাদের কূটনৈতিক কৌশলের অংশ।
দিল্লি থেকে পাকিস্তানকে কড়া ভাষায় সতর্ক করে তালিবান বিদেশমন্ত্রীর বক্তব্য—এটি কেবল এক দেশের প্রতিক্রিয়া নয়, বরং সারাবিশ্বের দৃষ্টিতে দক্ষিণ এশিয়ার সুরক্ষাগত নৈরাজ্য ও কূটনৈতিক জটিলতারই প্রতিফলন। পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মুত্তাকি জানিয়েছিলেন, তবে কীভাবে সংলাপ ও মধ্যস্থতা বাস্তবে কার্যকর হবে এবং সীমান্তে আর কোনও তীব্র সম্মুখীনতা হবে কি না— সেটাই এখন নিকট ভবিষ্যতের বড় প্রশ্ন।




