কলকাতা টাইমস নিউজ :আন্তর্জাতিক ডেস্ক: :কলকাতা ,১৩ অক্টোবর :
আমেরিকা ছাড়ছেন নোবেলজয়ী অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও এসথার ডুফলো, যোগ দিচ্ছেন জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে
বিশ্ববিখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও নোবেলজয়ী দম্পতি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এসথার ডুফলো আমেরিকা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁরা আগামী বছর থেকে সুইজারল্যান্ডের জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে (University of Zurich) অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপনা করবেন।
জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ২০২৬ সালের জুলাই থেকে তাঁরা ওই প্রতিষ্ঠানে যোগ দেবেন। বর্তমানে তাঁরা দু’জনই যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে (MIT) অধ্যাপনা করছেন।
জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে বলা হয়েছে, অভিজিৎ-ডুফলো দম্পতি সেখানে একটি নতুন গবেষণা কেন্দ্র — “লেমান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট, এডুকেশন অ্যান্ড পাবলিক পলিসি” প্রতিষ্ঠা করবেন।
এই কেন্দ্রের মূল লক্ষ্য হবে উন্নয়ন, শিক্ষা ও জননীতি বিষয়ে বাস্তবমুখী গবেষণাকে উৎসাহ দেওয়া এবং গবেষকদের সঙ্গে নীতিনির্ধারকদের সংযোগ ঘটানো।
সেন্টারটি অর্থায়ন করবে লেমান ফাউন্ডেশন, এবং অভিজিৎ ও ডুফলো উভয়েই এর সহ-পরিচালক হবেন।
যদিও জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবৃতিতে তাঁদের পদক্ষেপের কারণ স্পষ্ট করা হয়নি, তবুও বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণা তহবিল কমে যাওয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে একাডেমিক স্বাধীনতার উপর চাপ এই সিদ্ধান্তের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে গবেষণাখাতে বরাদ্দ কাটছাঁট এবং বিজ্ঞানীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চাপ নিয়ে সম্প্রতি প্রবল বিতর্ক চলছে।
এই অবস্থায় বহু আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী ও গবেষক ইউরোপ বা এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
২০২৫ সালের মার্চ মাসে ফরাসি দৈনিক Le Monde-এ প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে ডুফলো যুক্তরাষ্ট্রে “অভূতপূর্ব আক্রমণ” চালানোর অভিযোগ করেছিলেন বিজ্ঞান ও গবেষণার স্বাধীনতার উপর।
নতুন পদে যোগ দিয়েও দম্পতি তাঁদের MIT-র আংশিক দায়িত্ব বজায় রাখবেন।
ডুফলো বলেন,
“এই নতুন লেমান সেন্টার আমাদের এমন এক প্ল্যাটফর্ম দেবে, যেখানে গবেষণা, ছাত্রছাত্রীদের পরামর্শ এবং বাস্তব নীতি প্রণয়নের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করা যাবে।”
অন্যদিকে, জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মাইকেল শ্যেপম্যান বলেন,
“বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দুই অর্থনীতিবিদকে আমাদের দলে পেয়ে আমরা উচ্ছ্বসিত। তাঁদের উপস্থিতি আমাদের গবেষণা সংস্কৃতিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।”
অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও এসথার ডুফলো ২০১৯ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পান মাইকেল ক্রেমারের সঙ্গে,
তাঁদের “বিশ্ব দারিদ্র্য হ্রাসের পরীক্ষামূলক পদ্ধতি” উদ্ভাবনের জন্য।
তাঁদের গবেষণা প্রমাণ করেছে— ছোট পরিসরে নীতি-পরীক্ষা ও বাস্তব তথ্য বিশ্লেষণ কিভাবে বৃহৎ সামাজিক পরিবর্তন আনতে পারে।
এই ঘোষণাটি এসেছে ২০২৫ সালের অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা হওয়ার ঠিক এক সপ্তাহ আগে।
যা আবারও অভিজিৎ ও ডুফলোর মতো গবেষকদের প্রভাব ও আন্তর্জাতিক প্রাসঙ্গিকতাকে নতুন করে সামনে আনছে।
নোবেলজয়ী এই দম্পতির নতুন গন্তব্য শুধু ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয় — বরং এটি আজকের বিশ্ব একাডেমিক ও গবেষণা জগতের এক বড় বার্তা।
যেখানে স্বাধীনতা, গবেষণার পরিবেশ ও নীতিগত প্রভাব— এই তিনকে একসঙ্গে এগিয়ে নেওয়ার প্রয়াসই তাঁদের পথচলার আসল শক্তি।




