কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব সংবাদদাতা :কলকাতা / মুম্বই : ১৪ অক্টোবর :
মুম্বইয়ের বেহাল রাস্তা আর নাগরিকদের প্রাণহানির ঘটনায় বোম্বে হাই কোর্টের ধমক — শহরের রাস্তায় খানাখন্দে ভরা অবস্থা আর চলবে না। আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ, রাস্তার গর্ত বা খোলা ম্যানহোলে পড়ে কারও মৃত্যু হলে নিহতের পরিবারকে ৬ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। শুধু তাই নয়, আহত হলে সেই অনুযায়ী আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছে আদালত।
এই রায়ে বিচারপতি রেবতী মোহিতে ডেরে ও সন্দেশ পাতিলের বেঞ্চ স্পষ্টভাবে বলেছেন —
“রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সরকার বা প্রশাসনেরই। এই অবহেলার জন্য কোনও ক্ষমা করা যায় না।”
মুম্বই শহরের বেহাল রাস্তাগুলিকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল জনস্বার্থ মামলা। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও গর্তে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। এমনকি বৃষ্টির জলে ডুবে থাকা রাস্তায় ম্যানহোলের ফাঁদে প্রাণ হারানোর ঘটনাও বারবার ঘটেছে।
এই অবস্থায় মামলার শুনানিতে আদালত মন্তব্য করে —
“দেশের বাণিজ্য নগরী মুম্বইয়ের রাস্তার এই অবস্থা অগ্রহণযোগ্য। স্থানীয় প্রশাসন তার দায় এড়িয়ে যেতে পারে না।”
বিচারপতিরা বলেন, “যতদিন না প্রশাসনের উপর আর্থিক দায়বদ্ধতা আসে, ততদিন এই উদাসীনতা বন্ধ হবে না।”
আদালত জানিয়েছে, রাস্তার গর্ত, ভাঙা ফুটপাত, খোলা ম্যানহোল বা অব্যবস্থাপনার কারণে যদি কারও মৃত্যু ঘটে, তাহলে পরিবারের হাতে অবিলম্বে ৬ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
যদি কেউ আহত হন, সেক্ষেত্রেও উপযুক্ত আর্থিক সহায়তা দিতে হবে।
বিচারপতিরা স্পষ্টভাবে বলেন,
“এমন ক্ষতিপূরণই প্রশাসনকে দায়িত্ববান করবে। না হলে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু ‘নিয়মিত ঘটনা’ হিসেবেই থেকে যাবে।”
বোম্বে হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, মুম্বইয়ের রাস্তায় যে পরিমাণ গর্ত, ফাটল ও জলজমা দেখা যাচ্ছে, তা কোনও সভ্য শহরের মানদণ্ডে মেলে না। আদালত প্রশ্ন তুলেছে —
“যেখানে কোটি কোটি টাকা রাস্তা সংস্কারের জন্য বরাদ্দ হয়, সেখানে বারবার এমন দুর্ঘটনা কেন ঘটছে?”
আদালত রাজ্য প্রশাসন, পুরসভা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলিকে সমন্বিতভাবে দায় স্বীকার করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, মহারাষ্ট্রজুড়ে খারাপ রাস্তার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। কখনও স্কুটার আরোহী গর্তে পড়ে মারা যাচ্ছেন, কখনও বৃষ্টির জলে ঢেকে থাকা রাস্তায় খোলা ম্যানহোলে প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ।
জনস্বার্থ মামলার আবেদনকারীরা আদালতে জানান,
“প্রতিবার সরকার তদন্তের আশ্বাস দেয়, কিন্তু প্রকৃত দায় কারও ঘাড়ে পড়ে না।”
এই বক্তব্যের পরেই আদালত জানায় — এখন থেকে দায়বদ্ধতা নির্দিষ্ট করতে হবে এবং সেই সঙ্গে ক্ষতিপূরণের টাকা সরাসরি নিহত বা আহতের পরিবারকে দিতে হবে।
রায়ের শেষাংশে আদালত বলে দিয়েছে —
“এই অবহেলার জন্য কোনও ক্ষমা করা যায় না। নাগরিকদের প্রাণ নিয়ে ছেলেখেলা হতে পারে না।”
আদালতের এই পর্যবেক্ষণ শুধুমাত্র মুম্বই নয়, পুরো দেশের নাগরিক পরিকাঠামো ও প্রশাসনিক জবাবদিহির প্রশ্নেও এক গুরুত্বপূর্ণ নজির তৈরি করল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নির্দেশ শুধুমাত্র ক্ষতিপূরণের বিষয় নয়— এটি প্রশাসনিক জবাবদিহির এক নতুন অধ্যায়। ভবিষ্যতে অন্য রাজ্যেও যদি এই রায়কে অনুসরণ করা হয়, তাহলে নাগরিক নিরাপত্তা ও সড়ক ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকারের মধ্যে আরও দায়বোধ ও সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।




