spot_img
23 C
Kolkata
Friday, November 14, 2025
spot_img

বাংলাদেশের বগুড়া বিমানবন্দর পুনরুজ্জীবনে কৌশলগত চিন্তায় ভারত !

কলকাতা টাইমস নিউজ  :নিজস্ব সংবাদদাতা :কলকাতা : ১৪ অক্টোবর  :

বাংলাদেশের বগুড়া বিমানবন্দর পুনরুজ্জীবনের পরিকল্পনায় চিন্তিত ভারত, সীমান্তে বাড়ছে নজরদারি উদ্বেগ 

সীমান্তের কাছাকাছি বিমানঘাঁটির ‘দ্বৈত ব্যবহার’ ঘিরে বাড়ছে উদ্বেগ, নজর রাখছে দিল্লি !

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে বহু বছর ধরে অচল অবস্থায় পড়ে থাকা বগুড়া বিমানবন্দরকে আবার চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা। এই পদক্ষেপ শুধু বাংলাদেশের আঞ্চলিক উন্নয়নের প্রয়াস হিসেবেই দেখা হচ্ছে না, বরং ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের কাছেও এটি এক কৌশলগত নজরদারির বিষয় হয়ে উঠেছে। কারণ, বগুড়া বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক সীমান্তের একেবারে কাছাকাছি অবস্থিত এবং এর ‘দ্বৈত ব্যবহার’—অর্থাৎ বেসামরিক ও সামরিক উভয় প্রয়োজনে ব্যবহারের সম্ভাবনা—ভারতের উত্তর সীমান্তে নতুন ভাবনা তৈরি করছে।

বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন অথরিটি (CAAB) জানিয়েছে, বগুড়া বিমানবন্দর পুনরায় সচল করার জন্য ১,২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যেই বিমানবন্দরটিকে কার্যকর করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হচ্ছে, উত্তরবাংলার শিল্পাঞ্চল, পর্যটন কেন্দ্র ও ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা আরও মজবুত করা এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ানো।

তবে এই বিমানবন্দর ঘিরে শুধু অর্থনৈতিক পরিকল্পনাই নয়, সামরিক গুরুত্বও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বগুড়ায় ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি রাডার ইউনিট রয়েছে, যা ২০২৫ সালের জুন মাসে নতুন করে আধুনিকীকরণ করা হয়েছে।
নতুন GM 403M এয়ার ডিফেন্স রাডার সিস্টেম বসানোর ফলে বাংলাদেশের উত্তর আকাশসীমা এখন অনেক বেশি পর্যবেক্ষণক্ষম হয়েছে।
একজন ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞের ভাষায়,

“বগুড়া বিমানঘাঁটি যদি আবার দ্বৈত ব্যবহারের জন্য খোলা হয়, তবে উত্তর সীমান্তের আকাশপথে নজরদারির ভারসাম্য বদলে যেতে পারে।”

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বগুড়া বিমানবন্দর সামরিক প্রশিক্ষণক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। এখন সেই একই জায়গায় নতুন পরিকাঠামো গড়ে উঠলে এবং ৩,০০০ ফুটের কংক্রিট রানওয়ের সঙ্গে আধুনিক রাডার সংযুক্ত হলে, সেটি কৌশলগত দিক থেকে বাংলাদেশের বিমান প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে আরও জোরদার করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, এয়ার ভাইস মার্শাল এমডি মঞ্জুর কবির ভূঁইয়া অবশ্য দাবি করেছেন—

“এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য বগুড়া অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। এখানে শিল্পাঞ্চল, যেমন এসেনশিয়াল ড্রাগস ও উত্তরা মোটরসের মতো প্রতিষ্ঠান আছে। প্রতিবছর প্রায় ৫,০০০ বিদেশি পর্যটক এই অঞ্চলে আসেন। বিমানবন্দর চালু হলে উত্তরবঙ্গে বিপুল অর্থনৈতিক সুফল মিলবে।”

কিন্তু ভারতের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নের আবরণে’ সামরিক পরিকাঠামো মজবুত করার প্রবণতা উপেক্ষা করা যাবে না।
বিশেষত যখন চীন বাংলাদেশের বিভিন্ন পরিকাঠামো প্রকল্পে সক্রিয়ভাবে যুক্ত, তখন এই বিমানবন্দর পুনরুজ্জীবনও ভারতের কাছে নতুন নিরাপত্তা সমীকরণ তৈরি করতে পারে।

ভারতের কৌশলবিদদের মতে, লালমনিরহাট বিমানবন্দর—যা শিলিগুড়ি করিডরের খুব কাছে—আগে থেকেই বাংলাদেশের সামরিক প্রকল্পে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে ধারণা রয়েছে। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বগুড়ার বিমানবন্দর পুনরায় খোলা ভারতীয় প্রতিরক্ষা নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।

যদিও প্রকল্প বাস্তবায়নে জমি দখল ও অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা বড় বাধা হিসেবে রয়ে গিয়েছে, তবু বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা তিনটি অচল বিমানবন্দর পুনরুজ্জীবনের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ—তার মধ্যে অন্যতম বগুড়া।

ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলি ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পের উপর কড়া নজর রাখছে, কারণ তাদের মতে এই বিমানবন্দরগুলো ভবিষ্যতে বেসামরিক মুখোশে সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে, যা চীন কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিদেশি শক্তির আগ্রহকেও আমন্ত্রণ জানাতে পারে।

বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে বিমানবন্দর পুনরুজ্জীবন প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আর এই প্রকল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা বগুড়া বিমানবন্দর ও তার উন্নত রাডার ব্যবস্থা আগামী দিনে দুই প্রতিবেশী দেশের কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা আলোচনার অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে, এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,800SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles

Enable Notifications Thank You No thanks