কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব সংবাদদাতা :কলকাতা : ১৪ অক্টোবর :
রাজ্যে টোটোচালকদের জন্য শুরু হয়েছে নতুন অধ্যায়। এ বার থেকে আর নম্বর প্লেট ছাড়া রাস্তায় টোটো চলবে না। রাজ্য সরকারের নির্দেশ, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন না করালে টোটোর চাকা আর গড়াবে না।
সোমবার শিলিগুড়িতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কর্মসূচির সূচনা হয়। কোর্টমোড় সংলগ্ন পরিবহণ দপ্তরের দফতরে এক সরল কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ অনুষ্ঠানে শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব এবং অতিরিক্ত আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা (দার্জিলিং) বিশ্বজিৎ দাস উপস্থিত ছিলেন।
এই দিনে জেলার প্রথম টোটো রেজিস্ট্রেশনের শংসাপত্র পেলেন চম্পাসারি দক্ষিণ পলাশ এলাকার বাসিন্দা মালতি রায়। তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় একটি কিউআর কোডযুক্ত ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট—যা রাজ্যের প্রথম। পরিবহণ দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম দিনেই বেশ কয়েকজন চালক তাঁদের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন।
রাজ্য সরকার জানিয়েছে, রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এরপর থেকে নম্বর প্লেট বা বৈধ রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কোনও টোটো রাস্তায় নামলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মেয়র গৌতম দেব বলেন,
“আজ থেকে শিলিগুড়িতে টোটো রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এটা রাজ্যের তরফে বড় পদক্ষেপ। আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। এর পর বৈধ রেজিস্ট্রেশন ছাড়া টোটো চলতে দেওয়া হবে না।”
অতিরিক্ত আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা বিশ্বজিৎ দাস জানান, রেজিস্ট্রেশনের জন্য টোটো কেনার মূল রসিদ, আধার কার্ডের ফটোকপি, এবং যদি রসিদ হারিয়ে যায় তবে স্ব-ঘোষণাপত্র (Self Declaration) জমা দিতে হবে।
পরিবহণ দপ্তরের পরিকল্পনা অনুযায়ী, শিলিগুড়ি শহরের টোটো চলাচলকে নিয়ন্ত্রণে আনতে ৮৫টি নির্দিষ্ট রুট ভাগ করা হবে।
৩০ নভেম্বর পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শেষে, কোন এলাকা থেকে কত আবেদন এসেছে তার ভিত্তিতে এই রুটগুলি নির্ধারণ করা হবে।
পরিবহণ দপ্তরের এক আধিকারিক জানান,
“শহরে টোটোর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। তাই রেজিস্ট্রেশন ও রুট নির্ধারণের মাধ্যমে একদিকে যেমন শৃঙ্খলা আসবে, তেমনই পরিবহণ ব্যবস্থাও আরও সহজ হবে।”
এতদিন পর্যন্ত টোটো চালাতে কোনও সরকারি কর দিতে হত না। তবে নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এখন থেকে ১,০০০ টাকা জমা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে।
প্রথম ছয় মাস কোনও অতিরিক্ত ফি লাগবে না, তবে সপ্তম মাস থেকে প্রতি মাসে ১০০ টাকা করে ফি দিতে হবে।
এই পুরো প্রক্রিয়াটি অনলাইনে সম্পন্ন করা যাবে, ফলে চালকদের আর দপ্তরে লাইনে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করতে হবে না।
শিলিগুড়ি দিয়ে শুরু হলেও রাজ্য সরকারের পরিকল্পনা, ধীরে ধীরে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত জেলায় এই রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চালু করা হবে।
পরিবহণ দপ্তরের এক কর্তা জানান,
“টোটো এখন রাজ্যের বহু মানুষের জীবিকার উৎস। তাই রেজিস্ট্রেশন করলে একদিকে যেমন সরকারি তথ্যভাণ্ডার সমৃদ্ধ হবে, তেমনই চালকরাও সরকারি সুরক্ষার আওতায় আসবেন।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজ্যের এই পদক্ষেপ টোটোচালকদের মধ্যে দায়িত্ববোধ বাড়াবে। পাশাপাশি বেআইনি টোটোচালনা, রাস্তায় যানজট ও দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমবে।
মালতি রায়, যিনি জেলার প্রথম রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত টোটোচালক, হাসতে হাসতে বললেন,
“এটা শুধু কাগজ নয়, আমাদের নিরাপত্তা ও সম্মানের প্রমাণ। এখন আমরা বৈধভাবে রাস্তায় নামতে পারব।”
সব মিলিয়ে রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগ টোটোচালকদের জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। আগামী কয়েক সপ্তাহে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া কতটা গতিশীল হয়, এবং শহরগুলিতে এর প্রভাব কীভাবে পড়ে, এখন সেটাই দেখার অপেক্ষা।




