কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব সংবাদদাতা :কলকাতা /পাটনা : ১৫অক্টোবর
জল্পনার অবসান, বিজেপিতে যোগ দিলেন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী মৈথিলী ঠাকুর – বিহারে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনাও উজ্জ্বল
শেষ পর্যন্ত সত্যি হল দীর্ঘদিনের জল্পনা। জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী মৈথিলী ঠাকুর মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিলেন ভারতীয় জনতা পার্টিতে (বিজেপি)।
২৫ বছর বয়সি এই শিল্পী শুধু তাঁর কণ্ঠস্বর বা সংগীত প্রতিভার জন্যই নয়, বরং সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে বিহার-সহ সারা দেশেই পরিচিত মুখ। তাঁর বিজেপিতে যোগদানকে আসন্ন বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
মঙ্গলবার পাটনায় রাজ্য বিজেপি দফতরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিহারের বিজেপি সভাপতি দিলীপ জয়সওয়াল মৈথিলীর হাতে গেরুয়া পতাকা তুলে দেন।
উপস্থিত ছিলেন তাঁর পরিবারের সদস্যরাও। যোগদানের পর মৈথিলী বলেন,
“আমি বিহারের মেয়ে। এই রাজ্যের সংস্কৃতি, মাটির গন্ধ, মানুষের ভালোবাসা আমার রক্তে মিশে আছে। এখন সময় এসেছে সেই মানুষের সেবা করার।”
রাজনৈতিক মহলের মতে, এই বক্তব্যই প্রমাণ করে দিচ্ছে — মৈথিলী শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক নয়, সক্রিয় রাজনীতির ময়দানেও নিজের অবস্থান তৈরি করতে প্রস্তুত।
সূত্রের খবর, দ্বারভাঙা জেলার আলিনগর বিধানসভা কেন্দ্র থেকেই তাঁকে প্রার্থী করতে পারে বিজেপি।
এই আসন বর্তমানে দখলে রয়েছে বিজেপি বিধায়ক মিশ্রিলাল যাদবের। তবে এবারে আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী তালিকায় কিছু পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে,
“মৈথিলী ঠাকুরের মতো জনপ্রিয় মুখ প্রার্থী হলে বিজেপি তরুণ ও নারী ভোটারদের মধ্যে বড় প্রভাব ফেলতে পারবে।”
গত সপ্তাহেই মৈথিলী দেখা করেছিলেন বিজেপির বিহার ইনচার্জ বিনোদ তাওড়ে এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিত্যানন্দ রাইয়ের সঙ্গে।
তার পর থেকেই গুঞ্জন শুরু হয় তাঁর বিজেপিতে যোগদান নিয়ে।
এই পরিপ্রেক্ষিতেই তাওড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছিলেন —
“১৯৯৫ সালে লালুপ্রসাদ যাদব ক্ষমতায় আসার সময় যে পরিবার বিহার ছেড়ে চলে গিয়েছিল, সেই পরিবারের মেয়ে, বিখ্যাত গায়িকা মৈথিলী ঠাকুর এখন পরিবর্তিত বিহারের শান্তি ও উন্নতি দেখে ফেরত আসছেন।”
এই পোস্টই যেন বিজেপি-যোগের পূর্বাভাস ছিল।
বিনোদ তাওড়ের পোস্টের কিছু পরেই মৈথিলী নিজেও একটি ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করেন। তিনি লেখেন,
“যাঁরা বিহারের জন্য বড় স্বপ্ন দেখেন, তাঁদের প্রতিটি বার্তা আমার কাছে অনুপ্রেরণা। তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানাই।”
এই লেখাই যেন স্পষ্ট করে দিয়েছিল — রাজনীতির মঞ্চে পা রাখার প্রস্তুতি তখনই শুরু হয়ে গিয়েছিল মৈথিলীর।

মৈথিলী ঠাকুর সংগীত জগতে একটি পরিচিত নাম। তাঁর কণ্ঠে মিথিলা লোকগীতি, ভজন, ও ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের ছোঁয়া মুগ্ধ করেছে শ্রোতাদের।
তাঁর জনপ্রিয়তা সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন পর্যায়ে যে, লক্ষ লক্ষ অনুসারী প্রতিদিন তাঁর গান শোনেন ও শেয়ার করেন।
এখন সেই গানের তরুণী যদি রাজনীতির মঞ্চে দাঁড়ান, তাহলে তা নিঃসন্দেহে বিজেপির ভাবমূর্তি ও প্রচারে এক আবেগঘন মাত্রা যোগ করবে।

উল্লেখ্য, কয়েক বছর আগে মা শবরীকে নিয়ে মৈথিলীর গাওয়া একটি ভজন শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
তখনই তিনি প্রকাশ্যে এই তরুণ গায়িকার প্রশংসা করেন এবং বিহারের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেন।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত,
“মৈথিলীর সঙ্গে বিজেপির এই সম্পর্কের সূচনা আসলে সেই সময় থেকেই। এখন তা আনুষ্ঠানিক রূপ পেল।”
আসন্ন বিহার বিধানসভা নির্বাচন হবে দু’দফায় — ৬ ও ১১ নভেম্বর, আর ভোটগণনা হবে ১৪ নভেম্বর।
নির্বাচনের মুখে মৈথিলীর মতো তরুণ সাংস্কৃতিক মুখ বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় নির্বাচনী প্রচারে নতুন মাত্রা যোগ হলো বলেই মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে,
“বিহারের সংস্কৃতি ও সঙ্গীতের আবেগকে কাজে লাগিয়ে বিজেপি এবার ‘ইমোশনাল কানেক্ট’ তৈরি করতে চাইছে।”
সংগীতের মঞ্চে যিনি কোটি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন, সেই মৈথিলী ঠাকুর এবার জনতার মঞ্চে দাঁড়িয়ে মানুষের সেবা করার অঙ্গীকার করলেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ এক প্রতীকী মুহূর্ত — যেখানে বিহারের মাটির কণ্ঠ এবার রাজ্যের কণ্ঠ হয়ে উঠছে রাজনীতির ময়দানে।





