কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব সংবাদদাতা :কলকাতা : ১৫অক্টোবর
ভারতে তালিবান সরকারের বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সফরকে ঘিরে শুরু হয়েছে প্রবল বিতর্ক। দিল্লিতে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের পর, উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরে তাঁকে যে রাজকীয় অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে, তা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বর্ষীয়ান গীতিকার ও চিত্রনাট্যকার জাভেদ আখতার।
সামাজিক মাধ্যমে তিনি লেখেন, “লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছে আমার। বিশ্বের সবচেয়ে নিষ্ঠুর সংগঠনের প্রতিনিধি এমনভাবে অভ্যর্থনা পাচ্ছেন—এটা মেনে নেওয়া যায় না। যারা সন্ত্রাসের বিরোধিতা করেন, তারাই আজ সেই সংগঠনের সদস্যদের ডেকে এনে বরণ করছেন! এটি ভারতের ঐতিহ্য ও নৈতিকতার পরিপন্থী।”
তালিবান বিদেশমন্ত্রীর সাহারানপুর সফরে স্থানীয় ধর্মীয় সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে যে রীতিমতো শোভাযাত্রা ও ফুলের মালা পরিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয়, তা নিয়েই ফুঁসে উঠেছেন জাভেদ আখতার। তিনি আরও মন্তব্য করেন,
“দেওবন্দেরও লজ্জা হওয়া উচিত। একজন মানুষ, যিনি মেয়েদের শিক্ষার অধিকার কেড়ে নিয়েছেন, নারী স্বাধীনতার বিরোধী—তাঁকে কিভাবে স্বাগত জানানো যায়? এটা ভারতীয় সমাজের মূল্যবোধের অপমান।”
প্রসঙ্গত, আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি ছয় দিনের সফরে গত বৃহস্পতিবার ভারতে পৌঁছান। সফরের শুরুতেই দিল্লিতে তিনি ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেন। তারপর আফগান দূতাবাসে সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত হন, যেখানে প্রথমে কোনও মহিলা সাংবাদিককে দেখা যায়নি—ফলে ‘লিঙ্গ বৈষম্য’-এর অভিযোগ ওঠে এবং তীব্র বিতর্ক শুরু হয়।
পরবর্তী সাংবাদিক বৈঠকে অবশ্য মহিলা সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখা যায়, তবে তাতেও বিতর্ক থামেনি।
তালিবান মন্ত্রীর সফরের শেষ পর্যায়ে সাহারানপুরে তাঁর সম্মানার্থে বিশেষ আয়োজন করা হয়। স্থানীয় কিছু ধর্মীয় নেতা তাঁকে হাতজোড় করে স্বাগত জানান, ফুলের মালা পরান, এমনকি ‘অতিথি দেবো ভবঃ’ স্লোগানও শোনা যায়। এই ঘটনাতেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাভেদ আখতার ছাড়াও দেশের বহু প্রগতিশীল মনীষী।
রাজনৈতিক মহলেও প্রশ্ন উঠেছে—যে সংগঠন মেয়েদের স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ করেছে, শিল্প-সংস্কৃতি ধ্বংস করেছে, মানবাধিকারের লঙ্ঘন করেছে, সেই সরকারের প্রতিনিধি ভারতে এমন উষ্ণ অভ্যর্থনা কেন পাবেন?
অন্যদিকে ভারত সরকার যদিও এখনো এই বিতর্কে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে কূটনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছেন—আফগানিস্তানের সঙ্গে সীমিত যোগাযোগ বজায় রাখার নীতি অনুসারেই মুত্তাকির সফরকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। তবে সাহারানপুরের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তাঁর প্রতি এই ‘রাজকীয় সম্মান’ ভারতীয় সরকারের আনুষ্ঠানিক কর্মসূচির অংশ নয়।
তবুও সমালোচকরা বলছেন, এই ধরনের অভ্যর্থনা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভুল বার্তা দিতে পারে—বিশেষত, যখন তালিবান শাসন এখনও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি এবং তাদের মানবাধিকারবিরোধী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে।
জাভেদ আখতারের টুইট মুহূর্তেই ভাইরাল হয়েছে। বহু ব্যবহারকারী তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে লিখেছেন—“ভারত মেয়েদের শিক্ষা ও স্বাধীনতার প্রতীক। সেই দেশে এমন এক ব্যক্তিকে সম্মান জানানো আমাদের জন্যই লজ্জার।”
অন্যদিকে, কিছু মহল আবার যুক্তি দিয়েছে—“কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষার জন্য যোগাযোগ রাখা মানেই সমর্থন নয়।”




