কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব সংবাদদাতা :কলকাতা / নায়দিলি : ১৫অক্টোবর
বহু বিতর্কিত এবং বহুল প্রচারিত সহারা গোষ্ঠীর বিশাল সম্পত্তি এবার শিল্পপতি গৌতম আদানির হাতে যেতে পারে কি না, সেই প্রশ্নেই সরগরম দেশের আইনি অঙ্গন। প্রয়াত সহারা কর্ণধার সুব্রত রায়ের মৃত্যুর পর তাঁর গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানো হয়েছে—দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বহু কোটি টাকার সম্পত্তি আদানি গোষ্ঠীকে বিক্রি করার অনুমতি দেওয়া হোক।
মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ডি.ওয়াই. চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ (বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি এম.এম. সুন্দরেশ) এই মামলার প্রাথমিক শুনানিতে কেন্দ্রীয় সরকার এবং বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি-র মতামত চেয়েছে। আদালত জানিয়েছে, “সহারা গোষ্ঠীর প্রস্তাবের বিষয়ে কেন্দ্র এবং সেবির অবস্থান জানা প্রয়োজন, তারপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
সহারা ইন্ডিয়া কমার্শিয়াল কর্পোরেশন লিমিটেড (SICCL)-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সংস্থার কাছে থাকা ৮৮টি স্থাবর সম্পত্তি শিল্পপতি গৌতম আদানির সংস্থাকে বিক্রি করতে চায় তারা। এই বিক্রির অর্থ দিয়ে বহু বছর ধরে আটকে থাকা লগ্নিকারীদের পাওনা টাকাই পরিশোধ করতে চায় সহারা।
আবেদনে বলা হয়েছে, সহারার মোট প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির মধ্যে ১৬ হাজার কোটি টাকা ইতিমধ্যেই উদ্ধার করা হয়েছে এবং সম্পূর্ণ অর্থ সেবি-র কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। বাকি অর্থ মেটাতে আদানি গোষ্ঠীর কাছে সম্পত্তি বিক্রির পরিকল্পনা করেছে তারা।
এক নজরে কোন কোন সম্পত্তি বিক্রির প্রস্তাব
সহারার হাতে থাকা দেশের বিভিন্ন রাজ্যের একাধিক প্রিমিয়াম সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে—
-
মহারাষ্ট্রের লোনাভালার কাছে অ্যাম্বি ভ্যালি সিটি,
-
উত্তরপ্রদেশের লখনউ সংলগ্ন সহারা নগর,
-
দিল্লি, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে ছড়িয়ে থাকা আরও কয়েক ডজন জমি ও আবাসন প্রকল্প।
এই সবকটি মিলিয়ে সহারার হাতে এখনও বিপুল সম্পত্তি রয়েছে। গোষ্ঠীর তরফে জানানো হয়েছে, এই সম্পত্তি বিক্রিই এখন একমাত্র উপায়—বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষায় থাকা বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার।
সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে নির্দেশ দিয়েছে ১৭ নভেম্বরের মধ্যে কেন্দ্রের মতামত জানাতে। একইসঙ্গে সেবিকেও আদালতের সামনে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া, মামলার আদালত-নিযুক্ত বন্ধু (Amicus Curiae) অ্যাডভোকেট শেখর নাফাদে-কে ৮৮টি সম্পত্তির সম্পূর্ণ বিবরণ ও মূল্যায়ন-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রয়াত সুব্রত রায় একসময় দেশের অন্যতম প্রভাবশালী শিল্পপতি ছিলেন। তাঁর সহারা গোষ্ঠী রিয়েল এস্টেট থেকে আর্থিক পরিষেবা, এমনকি খেলাধুলা ও মিডিয়া পর্যন্ত নানা ক্ষেত্রে ছাপ রেখেছিল। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয় এক দশকেরও বেশি আগে। সেবি ও আদালতের একাধিক নির্দেশের পরও অর্থ ফেরত প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রিতায় জড়িয়ে পড়ে।
এখন সেই সম্পত্তি বিক্রির দায়িত্ব নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন গৌতম আদানির সংস্থা—যা আদালতের অনুমোদন পেলে দেশের আর্থিক ইতিহাসে এক বড় দৃষ্টান্ত হতে পারে।
এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ১৭ নভেম্বর। আদালত জানিয়েছে, কেন্দ্র ও সেবির মতামত পাওয়ার পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, আদানি গোষ্ঠী সত্যিই সহারার সম্পত্তি কিনতে পারবে কি না।




