spot_img
22 C
Kolkata
Friday, November 14, 2025
spot_img

হায়দরাবাদে মর্মান্তিক ঘটনা: যমজ সন্তানকে শ্বাসরোধে খুন করে আত্মঘাতী মা, অভিযোগ স্বামীর বিরুদ্ধে !

কলকাতা টাইমস নিউজ  :নিজস্ব সংবাদদাতা :কলকাতা / হায়দরাবাদ :১৫অক্টোবর 

সুস্থ দুই যমজ সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন এক তরুণী মা। শেষ পর্যন্ত সেই দুশ্চিন্তাই তাঁকে ঠেলে দিল ভয়াবহ সিদ্ধান্তের দিকে। দু’বছরের যমজ সন্তানকে শ্বাসরোধে খুন করে ফ্ল্যাটের ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হলেন ২৭ বছরের এক মহিলা।
মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে হায়দরাবাদের সাইবারাবাদ এলাকার বালানগর থানার পদ্মনগরে, সোমবার গভীর রাতে।

পুলিশ সূত্রে খবর, মৃত মহিলার নাম চল্লারি শৈলক্ষ্মী (২৭)। তাঁর স্বামী অনিল কুমার একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। তাঁদের যমজ সন্তান — চেতন কার্তিকেয় (ছেলে) ও লাস্যতা ভল্লী (মেয়ে) — জন্ম থেকেই অসুস্থ।

পুলিশ জানিয়েছে, ছেলের কথা বলার সমস্যা ছিল, নিয়মিত স্পিচ থেরাপি চলছিল হাসপাতালে। মেয়েটিও ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়ত, প্রায়ই চিকিৎসা করাতে হত।
এই পরিস্থিতিতে সংসারে নেমে আসে এক অদৃশ্য চাপ। প্রতিবেশীদের কথায়,

“প্রায়ই শৈলক্ষ্মী ও অনিলের মধ্যে ঝগড়া হতো। বাচ্চাদের অসুস্থতা নিয়ে ওঁরা খুব চিন্তিত থাকতেন।”

পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যায়ও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তীব্র বচসা হয়। তারপরেই অনিল আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যান।
গভীর রাতে ফ্ল্যাটে একা ছিলেন শৈলক্ষ্মী। তখনই তিনি প্রথমে তাঁর দুই সন্তানকে গলা টিপে খুন করেন, তারপর ফ্ল্যাটের ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী,

“শৈলক্ষ্মীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে হতাশা ও মানসিক চাপ কাজ করছিল। পরিবারের চিকিৎসা খরচ ও সন্তানের শারীরিক অবস্থা তাঁকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছিল।”

মঙ্গলবার ভোরে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। তিনজনের নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ ধারণা করছে, দাম্পত্য কলহ ও মানসিক অবসাদই এই মর্মান্তিক ঘটনার মূল কারণ।

পুলিশ জানিয়েছে, শৈলক্ষ্মী অন্ধ্রপ্রদেশের এলুরু জেলার নুজভিদ এলাকার বাসিন্দা।
ঘটনার পর শৈলক্ষ্মীর বাপের বাড়ির পরিবার অনিল কুমারের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ দায়ের করেছে।
সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই অনিলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, এবং বিস্তারিত তদন্ত শুরু হয়েছে।

পদ্মনগরের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শৈলক্ষ্মী বাইরে থেকে অত্যন্ত শান্ত ও যত্নশীলা মা বলে মনে হতো।
কিন্তু ভিতরে ভিতরে তিনি এক অদৃশ্য মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে ডুবে যাচ্ছিলেন।

এক প্রতিবেশী বলেন,

“বাচ্চাদের নিয়ে ওঁর খুব কষ্ট ছিল। কিন্তু আমরা ভাবতেও পারিনি এমন কিছু করবে।”

মনোবিদদের মতে, এই ঘটনা শুধুমাত্র পারিবারিক কলহ বা দারিদ্র্যের গল্প নয় — এটি সমাজে মানসিক স্বাস্থ্যের অবহেলার এক ভয়াবহ দৃষ্টান্ত।
পরিবারের দায়িত্ব, সন্তানের অসুস্থতা, চিকিৎসার চাপ — সব মিলিয়ে শৈলক্ষ্মীর মতো বহু মা নীরবে লড়াই করেন প্রতিদিন।

বিশেষজ্ঞদের মতে,

“মানসিক অবসাদ বা হতাশা কেবল ব্যক্তিগত বিষয় নয়, এটি সামাজিক সচেতনতার অভাবের ফলও বটে।”

হায়দরাবাদের এই ঘটনাটি এক অস্বস্তিকর প্রশ্ন তুলে দেয় — কতটা একা হয়ে পড়ছেন আজকের মায়েরা?
চিকিৎসা, মানসিক পরামর্শ ও পারিবারিক সহানুভূতির ঘাটতি যদি সময়মতো পূরণ না হয়, তবে এমন করুণ পরিণতির পুনরাবৃত্তি হয়তো রোধ করা যাবে না।

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,800SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles

Enable Notifications Thank You No thanks