কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব সংবাদদাতা :কলকাতা : ১৫অক্টোবর
আসন্ন ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজ্যজুড়ে জোরকদমে চলছে ভোটার তালিকার ‘ম্যাপিং অ্যান্ড ম্যাচিং’ প্রক্রিয়া। কিন্তু সেই কাজ যত এগোচ্ছে, ততই সামনে আসছে অস্বস্তিকর কিছু তথ্য। ২০০২ সালের ভোটার তালিকার সঙ্গে এ বছরের তালিকা মেলাতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে— একাধিক জেলার ডেটা মিলছে না। কোথাও ৫০ শতাংশের বেশি নামই মেলেনি!
তবে নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, এই অমিলকে “ভয়ঙ্কর” নয়, বরং “প্রাকৃতিক পার্থক্য” হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, দুই দশকেরও বেশি সময়ের ব্যবধান— যেখানে নতুন প্রজন্ম ভোটার হিসেবে যুক্ত হয়েছে, বহু মানুষ মারা গেছেন, কেউ রাজ্য ছেড়ে অন্যত্র গিয়েছেন। তবুও এই বিপুল পার্থক্য কমিশনকে ভাবাচ্ছে।
সরকারি ভাষায় বলতে গেলে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের ভোটার ডেটা অন্য সময়ের ভোটার ডেটার সঙ্গে মেলানোই ‘ম্যাপিং অ্যান্ড ম্যাচিং’। অর্থাৎ, ২০০২ সালের তালিকায় যাঁদের নাম ছিল, তাঁরা ২০২৫ সালের তালিকায়ও আছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা। এই কাজের মূল উদ্দেশ্য—
-
নকল নাম বাদ দেওয়া,
-
অসঙ্গতি চিহ্নিত করা,
-
নতুন ভোটারদের সঠিকভাবে যুক্ত করা।
সিইও অফিসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করেছে এখনো মাত্র ছ’টি জেলা ও কলকাতা উত্তর। সেখানে ফলাফল নিম্নরূপ—
| জেলা | মিলের শতাংশ |
|---|---|
| ঝাড়গ্রাম | ৫১.৩৬% |
| মেদিনীপুর | ৬২.৯৪% |
| কালিম্পং | ৬৫.২৭% |
| আলিপুরদুয়ার | ৫৩.৭৩% |
| পুরুলিয়া | ৬১.২৯% |
| মালদহ | ৫৪.৪৯% |
| কলকাতা নর্থ | ৫৫.৩৫% |
অর্থাৎ, গড়ে ৫০ থেকে ৬৫ শতাংশ নামই মিলছে। বাকিদের ক্ষেত্রে হয় নামের বানান, ঠিকানা বা বয়সের অসঙ্গতি, নয়তো মৃত বা স্থানান্তরিত ভোটারদের নাম।
কমিশনের উচ্চপদস্থ এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। অনেক ভোটারের নাম ২০০২ সালের তালিকায় ছিল না কারণ তাঁরা তখন প্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন না বা রিভিশনে উপস্থিত হননি। আবার অনেকেই পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে রাজ্য ছেড়ে গেছেন। ফলে নাম মেলেনি মানেই তা বাদ পড়ছে— এমন নয়।”
তাঁর আরও সংযোজন, “যাঁদের নাম ২০০২ সালের তালিকায় নেই, কিন্তু পরিবারের অন্য সদস্যের নাম আছে, তাঁদের নামও যাচাই করে যুক্ত করা হবে।”
সম্প্রতি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের কর্তারা রাজ্যের ডিএমদের (জেলাশাসক) নির্দেশ দিয়েছিলেন— ১৫ অক্টোবরের মধ্যে ম্যাপিং অ্যান্ড ম্যাচিং প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে।
কিন্তু বাস্তবে এখনও উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, হাওড়া–র মতো বড় জেলার কাজ শেষ হয়নি। ফলে কমিশন ইতিমধ্যেই ‘রিমাইন্ডার’ পাঠিয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলিতে।
নির্বাচনী বিশ্লেষক সুব্রত ভট্টাচার্য বলছেন, “ভোটার তালিকা আপডেট হওয়া খুবই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ২০০২ সালে যার বয়স ১৮ হয়নি, সে এখন ৪০-এর কোঠায়। তাই ৫০ শতাংশ নাম মিলছে না মানে তালিকা ভুল নয়— বরং প্রজন্মগত পরিবর্তনের প্রতিফলন।”
তবে তিনি সতর্কও করেছেন, “এই প্রক্রিয়ায় যদি সত্যিই জীবিত ভোটারের নাম হারিয়ে যায়, তাহলে রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি হতে পারে। তাই কমিশনের কাজ অত্যন্ত সংবেদনশীল।”
কমিশন জানিয়েছে, সব জেলার তথ্য যাচাই শেষ হলে চূড়ান্ত রিপোর্ট দিল্লিতে পাঠানো হবে। এর পরে ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগে নতুন ভোটার তালিকার প্রকাশ ও আপত্তি-সংক্রান্ত সময়সীমা ঘোষণা করা হবে।
ততদিনে দেখা যাবে— পুরনো ভোটার তালিকার অমিল সত্যিই সামান্য, না কি কোনও বড়সড় ‘রাজনৈতিক ইঙ্গিত’ লুকিয়ে রয়েছে এর আড়ালে।
২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে এই ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ নিঃসন্দেহে কমিশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলির একটি। অমিলের কারণ খুঁজে বের করে প্রকৃত ভোটারদের নাম নিশ্চিত করাই এখন রাজ্যের প্রশাসনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।




