কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব সংবাদদাতা :কলকাতা : ১৫অক্টোবর
অবশেষে মাওবাদী ঘাঁটির এক সময়ের কুখ্যাত নাম আত্মসমর্পণ করলেন। নিহত মাওবাদী নেতা কিষেণজির ভাই মাল্লোজুলা বেণুগোপাল রাও ওরফে সোনু, ওরফে অভয়, মঙ্গলবার আত্মসমর্পণ করলেন মহারাষ্ট্রের গড়চিরৌলিতে। তাঁর সঙ্গে অস্ত্র নামালেন আরও ৬০ জন মাওবাদী কর্মী। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে এই আত্মসমর্পণকে বড় সাফল্য হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
কিছু সপ্তাহ আগেই বেণুগোপাল একটি প্রেস বিবৃতিতে অস্ত্র সমর্পণের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে ‘শান্তিবার্তা’ পাঠিয়েছিলেন। তারপর থেকেই অনুমান করা হচ্ছিল, দীর্ঘদিনের এই মাওবাদী নেতা অস্ত্র নামাতে পারেন। শেষ পর্যন্ত সেই জল্পনাতেই সিলমোহর পড়ল।
বেণুগোপালের আত্মসমর্পণ কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর আগে তাঁর স্ত্রী বিমলা চন্দা সিদাম ওরফে তারাক্কা, যিনি মাওবাদীদের দণ্ডকারণ্য জোনাল কমিটির নেত্রী ছিলেন, চলতি বছরের জানুয়ারিতে আত্মসমর্পণ করেন। কয়েক দিন আগেই কিষেণজির স্ত্রী সুজাতাও আত্মসমর্পণ করেছেন। এবার বেণুগোপালের আত্মসমর্পণে কার্যত মাওবাদী পরিবারের এক যুগের সমাপ্তি ঘটল।
বেণুগোপাল মূলত তেলঙ্গানার পেদাপল্লির বাসিন্দা। বি.কম পাশ করার পর আইটিআই সম্পূর্ণ করে ১৯৮০ সালে বাড়ি ছেড়ে চলে যান ছত্তিসগড়ের বস্তারে। সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর মাওবাদী জীবন। এক সময় বস্তার অঞ্চলে নিজের হাতে মাওবাদী সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু পরে সংগঠনের মধ্যে মতবিরোধ বাড়তে থাকে। তাঁকে ‘গদ্দার’ বা বিশ্বাসঘাতক বলে অভিযুক্ত করে মাওবাদীরা। এমনকি সংগঠনের তরফে তাঁকে জানানো হয়, নিজের একে–৪৭ রাইফেল জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করতে।
২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর ঝাড়গ্রামের বুড়িশোলের জঙ্গলে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয় কিষেণজির। সেই সময় থেকেই বেণুগোপালের মনোভাব পাল্টাতে শুরু করে বলে সূত্রের খবর। দাদা কিষেণজির মৃত্যুর পর থেকেই তিনি সংগঠনের নীতি ও দিকনির্দেশ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। অবশেষে বছর কয়েকের মধ্যে তিনি নিজেও অস্ত্র নামালেন।
নিরাপত্তা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে একের পর এক মাওবাদী নেতা নিহত বা আত্মসমর্পণ করছেন। মে মাসে ছত্তিসগড়ের নারায়ণপুর জেলায় গুলির লড়াইয়ে মারা গিয়েছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নাম্বালা কেশব রাও ওরফে বাসবরাজু। তার পরে একাধিক শীর্ষ নেতা হয় আত্মসমর্পণ করেছেন, নয় নিহত হয়েছেন। বেণুগোপালের আত্মসমর্পণ সেই ধারারই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বলে মনে করা হচ্ছে।
ছত্তিসগড়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেও সাই বলেছেন, “মাওবাদী সন্ত্রাস নির্মূলের লক্ষ্যে আমরা এক ধাপ এগোলাম। আগামী দিনে ছত্তিসগড়, বিশেষ করে বস্তার অঞ্চলে উন্নয়নের গতি আরও বাড়বে।”
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কয়েক দিন আগেই ঘোষণা করেছেন, “আগামী বছর ৩১ মার্চের মধ্যে দেশকে মাওবাদীমুক্ত করার লক্ষ্য পূরণ করা হবে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, বেণুগোপালের মতো এক সময়ের কৌশলগত মস্তিষ্কের আত্মসমর্পণ প্রমাণ করে, মাওবাদী আন্দোলন আর আগের জায়গায় নেই। ক্রমশ ধীরে ধীরে ভাঙছে তাদের প্রভাব ও বিশ্বাসযোগ্যতা। আর এই আত্মসমর্পণ হয়তো সেই ইতিহাসের মোড় ঘোরানোর মুহূর্ত হয়ে থাকবে।




