কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব সংবাদদাতা :কলকাতা : ১৬অক্টোবর
সকালবেলা অফিসগামী যাত্রীদের ভিড়ে শ্বাস নেওয়াও দুষ্কর হয়ে উঠত বিধাননগর রোড ও দমদম জংশন স্টেশনে। সরু প্ল্যাটফর্ম, হকারের ভিড়, আর তীব্র ঠেলাঠেলির মধ্যে ট্রেন ধরা যেন একপ্রকার যুদ্ধ। অবশেষে সেই পরিস্থিতি পাল্টাতে বড় পদক্ষেপ নিল ইস্টার্ন রেলওয়ে। দুই ব্যস্ততম স্টেশনে শুরু হয়েছে নতুন ভিড় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও যাত্রীবান্ধব উদ্যোগ।
বুধবার এক সাংবাদিক বৈঠকে শিয়ালদহ ডিভিশনের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) রাজীব সাক্সেনা জানান,
“আমাদের লক্ষ্য যাত্রীদের যাত্রা আরও নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও আরামদায়ক করা। বিধাননগর রোড ও দমদম জংশনে ট্রেন চলাচল ও প্ল্যাটফর্ম ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে।”
বিধাননগর রোড স্টেশনে প্রতিদিন ওঠানামা করেন প্রায় দেড় লক্ষাধিক যাত্রী। কিন্তু সরু প্ল্যাটফর্ম আর অব্যবস্থাপনার কারণে এতদিন ভিড় সামলানো ছিল চরম কঠিন। তাই শিয়ালদহ ডিভিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে,
-
শিয়ালদহ থেকে ছাড়া সব আপ লোকাল ট্রেন (নৈহাটি, রানাঘাট, কৃষ্ণনগর, গেদে, লালগোলা প্রভৃতি রুটে) চলবে শুধুমাত্র প্ল্যাটফর্ম নম্বর ১ থেকে,
-
অন্যদিকে, এক্সপ্রেস, মেল ও সাবারবান ট্রেনগুলো চলবে প্ল্যাটফর্ম নম্বর ২ দিয়ে।
রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভিড় কমাতে বিধাননগর রোডে আটটি এক্সপ্রেস ট্রেনের স্টপেজ তুলে নেওয়া হচ্ছে। কারণ প্রতিটি ট্রেনে এই স্টেশন থেকে দৈনিক মাত্র দুই থেকে পাঁচজন যাত্রী ওঠানামা করতেন। তাই অপ্রয়োজনীয় থামানো বন্ধ করা হচ্ছে।
পাশাপাশি, স্টেশন এলাকাকে ঘোষণা করা হবে ‘ভেন্ডর-ফ্রি জোন’, অর্থাৎ কোনও হকার বা দোকানদার প্ল্যাটফর্মে বসতে পারবেন না। যাত্রীদের সুবিধার জন্য আগেভাগে ঘোষণা ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে, যাতে বিভ্রান্তি বা হুড়োহুড়ি না হয়।
দমদম জংশনে আরও গোছানো পরিকল্পনা নিয়েছে রেল।
-
মেইন লাইনের ট্রেন থাকবে প্ল্যাটফর্ম ১ ও ২–এ,
-
আর সার্কুলার লাইন ও কলকাতা টার্মিনাল দিকের ট্রেন থাকবে প্ল্যাটফর্ম ৩, ৪ ও ৫–এ।
দ্বিতীয় প্রবেশপথে একটি নতুন বুকিং অফিস ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে, যাতে যাত্রীদের ভিড় ছড়িয়ে দেওয়া যায় এবং চলাচল আরও স্বচ্ছন্দ হয়।
শিয়ালদহ ডিভিশন জানিয়েছে, এই নতুন পদক্ষেপ কয়েকদিন পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হবে। সব কিছু মসৃণভাবে চললে তা স্থায়ীভাবে কার্যকর করা হবে।
রেলওয়ে আশা করছে, নতুন এই ব্যবস্থায় স্টেশনগুলিতে ভিড় অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে। যাত্রীরা ট্রেনে উঠতে-নামতে আর ঠেলাঠেলিতে ভুগবেন না, এবং তাদের দৈনন্দিন ট্রেনযাত্রা হবে আরও নিরাপদ, নিশ্চিন্ত ও আরামদায়ক।
বিধাননগর রোডে প্রতিদিন অফিসযাত্রী সোহিনী মুখোপাধ্যায় বললেন,
“সকালে ট্রেন ধরতে এত ভিড় হয় যে প্রাণ ওষ্ঠাগত। যদি সত্যিই আলাদা প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেন ছাড়ে ও হকাররা না বসেন, তাহলে অনেকটাই স্বস্তি পাব।”
দমদম জংশনের নিয়মিত যাত্রী সৌরভ রায়ও জানালেন,
“দ্বিতীয় গেট দিয়ে নতুন বুকিং কাউন্টার খোলায় অনেক সুবিধা হয়েছে। যাত্রীদের ভিড়ও ছড়িয়ে যাচ্ছে।”
ইস্টার্ন রেলওয়ের এই নতুন উদ্যোগ রোজকার ট্রেনযাত্রায় বড় পরিবর্তন আনতে পারে। কয়েক দশক ধরে বিধাননগর রোড ও দমদম জংশনের মতো ব্যস্ত স্টেশনগুলিতে যাত্রীদের ভিড় সামলাতে যে হিমশিম খেতে হতো, রেলের এই পদক্ষেপ তারই বাস্তব সমাধান হতে পারে।




