কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব সংবাদদাতা :কলকাতা : ১৬অক্টোবর
ভোরের আলো ফোটার আগেই তীব্র চাঞ্চল্য নিমতলা ঘাট এলাকায়। গঙ্গার জলে হঠাৎই মিলিয়ে গেল একটি সাদা রঙের গাড়ি! প্রথমে কেউ বুঝতেই পারেনি কী ঘটছে। স্থানীয়দের মনে হয়েছিল হয়তো কোনও ভারী বস্তু পড়েছে নদীতে। কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই দেখা যায়—একটি গাড়ি গঙ্গার ঢেউয়ের মধ্যে ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে। মুহূর্তে আতঙ্কে ছুটে আসেন আশপাশের মানুষজন।
ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ ভূতনাথ মন্দিরের কাছাকাছি নিমতলা ঘাটে। ঘটনাস্থলে সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছে যায় জোরাবাগান থানার পুলিশ ও ট্র্যাফিক গার্ডের কর্মীরা। শুরু হয় উদ্ধার অভিযান।
প্রথমে কীভাবে গাড়িটি গঙ্গার জলে পড়ল, তা নিয়ে তৈরি হয় ধোঁয়াশা। কারণ গাড়িটি যেখানে পার্ক করা ছিল, সেই জায়গা নদীর ঘাট থেকে কিছুটা দূরে। প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগে—এমন দূরত্ব থেকে গাড়ি গড়িয়ে মাঝগঙ্গা পর্যন্ত গেল কীভাবে?
পরে পুলিশের তদন্তে জানা যায়, অমিত আগরওয়াল নামে এক ব্যক্তি তাঁর মাকে নিয়ে ভূতনাথ মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিলেন। তাঁদের সাদা গাড়িটি নিমতলা শ্মশানঘাটের কাছে দাঁড় করানো ছিল। প্রাথমিক অনুমান, গাড়ির হ্যান্ডব্রেক টানা ছিল না, ফলে ঢাল বেয়ে সেটি ধীরে ধীরে নদীর দিকে গড়িয়ে যায়।
স্থানীয় কয়েকজন গাড়িটিকে আটকানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে গাড়িটি মাঝগঙ্গায় গিয়ে তলিয়ে যায়।
গাড়িটি গঙ্গায় পড়ে যাওয়ার সময় ঘাটে শুয়ে থাকা চারজন ব্যক্তি গাড়ির ধাক্কায় আহত হন। পুলিশ ও স্থানীয়রা দ্রুত তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।
পুলিশ সূত্রে খবর, একজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, তবে বাকি তিনজন এখনও হাসপাতালে ভর্তি। তাঁদের অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল বলে জানা গিয়েছে।
ঘটনার পর থেকেই এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF) ও দমকল বিভাগের ডুবুরি দল। নদীর স্রোত ও গভীরতা বেশি থাকায় গাড়িটি এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “আমরা ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছি। প্রাথমিকভাবে এটা দুর্ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে। গাড়ির ভিতরে কেউ ছিলেন না।”
এই ঘটনার পর নিমতলা ঘাটে ভিড় জমে যায় কৌতূহলীদের। বহু মানুষ নিজের চোখে গাড়িটিকে গঙ্গায় তলিয়ে যেতে দেখেছেন। স্থানীয় এক দোকানদার বলেন,
“গাড়িটা ধীরে ধীরে গড়িয়ে যাচ্ছিল। আমরা চিৎকার করেছিলাম, দৌড়েও গেছিলাম, কিন্তু আটকাতে পারিনি। তারপর হঠাৎ করে সেটি হুড়মুড় করে মাঝগঙ্গায় ডুবে গেল।”
পুলিশ দুর্ঘটনার পর থেকেই ওই এলাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে। ঘাটের ঢালে এখন ব্যারিকেড বসানো হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে এমন কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে।
গঙ্গার পাড়ের এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘিরে এখনো আতঙ্ক কাটেনি স্থানীয়দের মনে। উদ্ধারকাজ চলছে টানা। জল কমলে বা ডুবুরির দল শনাক্ত করতে পারলেই গাড়িটি টেনে তোলা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।




