spot_img
23 C
Kolkata
Friday, November 14, 2025
spot_img

সাতসকালে কলকাতা-সহ সাত জেলায় ইডি-র তল্লাশি অভিযান, ফের বালি পাচার মামলার সূত্রে তৎপরতা !

কলকাতা টাইমস নিউজ  :নিজস্ব সংবাদদাতা :কলকাতা : ১৬অক্টোবর 


কালের নরম আলো নামতেই ফের চাঞ্চল্য ছড়াল রাজ্যে। বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই তৎপর এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। বালি পাচার মামলার তদন্তে নতুন করে হানা দিল কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিকরা। কলকাতা থেকে শুরু করে ঝাড়গ্রাম, আসানসোল— রাজ্যের মোট সাতটি জায়গায় একযোগে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে।

সূত্রের খবর, কলকাতার বেন্টিং স্ট্রিটের একাধিক অফিসে হানা দিয়েছে ইডি। একইসঙ্গে ঝাড়গ্রামের লালগড় ও গোপীবল্লভপুর, আসানসোলের মুর্গাশোল, এবং আরও কয়েকটি এলাকায় তল্লাশি চলছে। সকাল থেকেই ওইসব অঞ্চলে বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে আইনশৃঙ্খলার কোনও সমস্যা না হয়।

প্রসঙ্গত, এক মাস আগেই ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরে শেখ জহিরুল শেখ নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে বালি পাচার মামলার সূত্রে তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছিল, জহিরুল পেশায় আগে ভিলেজ পুলিশ ছিলেন। পরে সেই চাকরি ছেড়ে তিনি বালির ব্যবসা শুরু করেন, এবং অল্প সময়েই বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়ে ওঠেন।

তদন্তকারী সংস্থার মতে, ওই সময় জহিরুলের কাছ থেকে পাওয়া নথি ও ডিজিটাল প্রমাণই এবার নতুন করে অভিযান শুরু করার ভিত্তি তৈরি করেছে। সূত্রের দাবি, জহিরুল ও তাঁর সহযোগীদের মাধ্যমে রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে অবৈধ বালি পাচার চক্র সক্রিয় রয়েছে।

ইডি-র একটি উচ্চপদস্থ সূত্র জানিয়েছে, এই বালি পাচার চক্র শুধুমাত্র স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর সঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের একাংশ, কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারদের যোগ রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। তদন্তে ইতিমধ্যেই একাধিক ফোন কল রেকর্ড, ব্যাংক লেনদেন ও জমির দলিল পরীক্ষা করা হচ্ছে।

“আমরা কিছু আর্থিক লেনদেনের ক্লু পেয়েছি, যেগুলি বেআইনি বালি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হতে পারে,” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইডি আধিকারিক জানিয়েছেন। “তল্লাশিতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নথি ও ডিজিটাল ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছে।”

কিছুদিন আগেই পুরসভাগুলিতে নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় রাজ্যজুড়ে অভিযান চালিয়েছিল ইডি। সেই সময় রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসু-র সল্টলেক অফিস ও একাধিক ব্যক্তির বাড়ি থেকে নথি উদ্ধার হয়। এবার বালি পাচার মামলার তদন্তে ইডি-র নতুন পদক্ষেপকে সেই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবেই দেখছেন ওয়াকিবহাল মহল।

রাজনৈতিক মহলের মতে, লোকসভা ভোটের আগে ইডি-র এই ধারাবাহিক অভিযান রাজ্যের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মহলে চাপ বাড়াচ্ছে। বিশেষত পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে বালি, পাথর ও কয়লা পাচার দীর্ঘদিন ধরেই কেন্দ্রীয় সংস্থার নজরে রয়েছে।

ইডি সূত্রে খবর, তল্লাশিতে পাওয়া কিছু প্রাথমিক নথিতে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের নাম উঠে এসেছে। তবে এখনও কোনও নির্দিষ্ট নাম প্রকাশ করা হয়নি। সংস্থা জানিয়েছে, সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে তারপরেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এক আধিকারিকের কথায়, “এই তদন্ত শুধু অর্থনৈতিক নয়, প্রশাসনিক স্তরেও দুর্নীতির জাল উন্মোচন করতে পারে। কয়েকটি জেলার প্রশাসনিক মহল থেকে ইতিমধ্যেই কিছু সহযোগিতা পাওয়া গিয়েছে।”

ইডি-র সকালের অভিযান ঘিরে ঝাড়গ্রাম, আসানসোল, এমনকি কলকাতাতেও তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। স্থানীয় মানুষজনের একাংশের মতে, বহু বছর ধরে এই অঞ্চলে অবৈধ বালি ব্যবসা চললেও তা নিয়ে প্রশাসনিকভাবে খুব একটা পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

অন্যদিকে, রাজ্যের শাসকদল এই অভিযানকে “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে দাবি করেছে। এক তৃণমূল নেতা বলেন, “ভোটের আগে রাজ্য সরকারকে কালিমালিপ্ত করতে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি ব্যবহার করা হচ্ছে।”

ইডি-র তল্লাশি অভিযানের পর এখন নজর পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে। সংস্থা সূত্রে ইঙ্গিত, তল্লাশিতে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ শেষে একাধিক ব্যক্তিকে শীঘ্রই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হতে পারে। ফলে বালি পাচার মামলার তদন্তে আসন্ন দিনে আরও বড় কোনও নাম সামনে আসার সম্ভাবনাই দেখছেন পর্যবেক্ষকরা।

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,800SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles

Enable Notifications Thank You No thanks