কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব সংবাদদাতা :কলকাতা / রোহতক : ১৬অক্টোবর
বহুল আলোচিত আত্মহত্যা কাণ্ডে চাঞ্চল্য—হরিয়ানার রোহতক জেলার পুলিশ দায়ের করল মামলা প্রয়াত আইপিএস আধিকারিক ওয়াই পুরণ কুমারের স্ত্রী, সিনিয়র আইএএস অফিসার অমনীৎ পি কুমার, তাঁর ভাই ও পঞ্জাবের বিধায়ক অমিত রতন, এবং আরও দুই পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ, তাঁরা সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সন্দীপ লাঠারের আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রোহতকের গ্রামে নিজের বাড়িতেই বন্দুকের গুলিতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় ৪১ বছর বয়সি এএসআই সন্দীপ লাঠারকে। তাঁর পাশেই মেলে একটি সুইসাইড নোট, যেখানে তিনি প্রয়াত আইপিএস অফিসার পুরণ কুমারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন।
লাঠারের মৃত্যু ঘিরে জোর রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। একই দিনে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নয়াব সিং সাইনি মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন এবং আশ্বাস দেন “উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে”।
রোহতকের এক সিনিয়র পুলিশ আধিকারিক জানান,
“অমনীৎ পি কুমার, তাঁর ভাই ও পঞ্জাব বিধায়ক অমিত রতন, প্রাক্তন এএসআই সুশীল কুমার এবং রোহতকের আইজি অফিসে কর্মরত কনস্টেবল সুনীলের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।”
এই মামলা ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (Bharatiya Nyaya Sanhita)-এর ১০৮ ও ৬১ ধারা অনুযায়ী রুজু করা হয়।
মুখ্যমন্ত্রীর অফিস অন স্পেশাল ডিউটি (ওএসডি) বিরেন্দর সিং বঢখালসা লাঠারের পরিবারের সঙ্গে বৈঠকে জানান, সরকারের পক্ষ থেকে সমস্ত দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে—
-
অভিযুক্তদের নামে এফআইআর,
-
মৃত এএসআই-এর স্ত্রীর জন্য উপযুক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি চাকরি,
-
এবং রাজ্য সম্মানের সঙ্গে শেষকৃত্য সম্পন্ন করা।
লাঠারের দেহ পাঠানো হয়েছে রোহতকের পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস (PGIMS)-এ ময়নাতদন্তের জন্য। বৃহস্পতিবার সকালেই হবে অটোপসি, আর দুপুর ১২টায় জিন্দ জেলার জুলানা গ্রামে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, এই ঘটনার মাত্র এক সপ্তাহ আগে, অর্থাৎ ৭ অক্টোবর, আত্মহত্যা করেন ২০০১ ব্যাচের আইপিএস অফিসার ওয়াই পুরণ কুমার। তিনি তখন রোহতকের সুনারিয়ার পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের ইনস্পেক্টর জেনারেল (IG) পদে নিযুক্ত ছিলেন।
পুরণ কুমার নিজের চণ্ডীগড়ের বাসভবনে গুলিবিদ্ধ হয়ে আত্মহত্যা করেন। বুধবার চণ্ডীগড়ে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়, রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁকে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হয়।
অমনীৎ, যিনি নিজেও একজন সিনিয়র আইএএস অফিসার, জানিয়েছেন—
“আমি ন্যায়বিচারের উপর আস্থা রাখি। আশা করি, দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সত্য প্রকাশ পাবে।”
তিনি চণ্ডীগড় পুলিশের কাছ থেকে ন্যায্য তদন্তের আশ্বাস পাওয়ার পরেই স্বামীর ময়নাতদন্তের অনুমতি দেন।
মেডিক্যাল বোর্ডের চারজন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়, যা সকাল ১১:৪৫-এ শুরু হয়ে দুপুর ১:২২-এ শেষ হয়।
লাঠারের চিঠিতে দুর্নীতির অভিযোগের পাশাপাশি উল্লেখ রয়েছে পুরণ কুমারের সঙ্গে দীর্ঘদিনের অশান্ত সম্পর্কের কথা। তবে তদন্তকারীরা বলছেন, এখনও পর্যন্ত আত্মহত্যার কারণ নিশ্চিত নয়।
রোহতক পুলিশ জানিয়েছে,
“সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনাটি সংবেদনশীল, তাই কোনো তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না।”
দুই পুলিশকর্মীর টানা আত্মহত্যার ঘটনায় প্রশাসনের ভিতরেও নেমেছে চাপা আতঙ্ক। রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জল্পনা—দুর্নীতি, ক্ষমতার লড়াই, না কি ব্যক্তিগত প্রতিশোধ—কোনটা এই মর্মান্তিক ঘটনার নেপথ্যে?
যদিও সরকার দাবি করেছে, “স্বচ্ছ ও সময়সীমাবদ্ধ তদন্তের মাধ্যমেই সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে।”




