কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব প্রতিবেদন :কলকাতা :২৩ অক্টোবর
‘দেশি কুকুররাও এখন কমান্ডো!’— এমন দৃশ্য ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দেখা যাচ্ছে। হেলিকপ্টার থেকে নামা, নদীতে র্যাফটিং করা, কিংবা জঙ্গি দমন অভিযানে অংশ নেওয়া— সবেতেই শামিল হচ্ছে ভারতীয় জাতের কুকুর, যেমন মুঢ়োল হাউন্ড এবং রামপুর হাউন্ড।
এই অভিনব প্রশিক্ষণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে মধ্যপ্রদেশের টেকানপুরে অবস্থিত ন্যাশনাল ট্রেনিং সেন্টার ফর ডগস (NTCD)— যা বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (BSF) অধীনস্থ সংস্থা।
BSF-এর এক সিনিয়র আধিকারিক জানিয়েছেন, প্রায় এক ডজন দেশি জাতের কুকুরকে প্রথমবারের মতো হেলিকপ্টার-ভিত্তিক কমান্ডো ট্রেনিং-এ অংশ নিতে দেওয়া হচ্ছে।
তাঁদের শেখানো হচ্ছে—
-
কীভাবে হেলিকপ্টার থেকে স্লিদারিং করে নিচে নামতে হয়,
-
কীভাবে রিভার র্যাফটিংয়ের সময় কমান্ডোর সঙ্গে তাল মেলাতে হয়,
-
এবং কীভাবে জঙ্গি বা সন্ত্রাসবাদীদের আস্তানা ঘেরাও করে ‘প্যাক অ্যাটাক’-এর মাধ্যমে আক্রমণ চালাতে হয়।
এই সমস্ত উচ্চ-ঝুঁকির প্রশিক্ষণ চলছে দেরাদুনের BSF অ্যাডভেঞ্চার ইনস্টিটিউটে, যেখানে গঙ্গার প্রবল স্রোতের মধ্যে কুকুরদের র্যাফটিং শেখানো হচ্ছে। পাশাপাশি এমআই–১৭ হেলিকপ্টারের সাহায্যে চলছে স্লিদারিং ড্রিল।
অভিযানের সময় কমান্ডোর পিঠে বিশেষ হারনেসে বাঁধা থাকে প্রশিক্ষিত কুকুরটি। হেলিকপ্টার থেকে নিচে নামার সঙ্গে সঙ্গেই কমান্ডোর নির্দেশ পেয়ে কুকুরটি ঝাঁপিয়ে পড়ে টার্গেট এলাকায়।
এতদিন পর্যন্ত কেবল ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (NSG)-এর বেলজিয়ান মালিনোই জাতের বিদেশি কুকুররাই এই ধরনের প্রশিক্ষণ পেত। কিন্তু এবার সেই জায়গা নিচ্ছে ভারতের নিজস্ব জাত— মুঢ়োল ও রামপুর হাউন্ড।
এই উদ্যোগের সূত্রপাত ২০২০ সালের আগস্ট মাসে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছিলেন— বিদেশি জাত নয়, ভারতীয় জাতের কুকুরকে গ্রহণ করুন। এরপর থেকেই NTCD দেশি কুকুরদের নিরাপত্তা বাহিনীতে অন্তর্ভুক্তির প্রশিক্ষণ শুরু করে।
BSF-এর ডেপুটি ইনস্পেক্টর জেনারেল (ভেটেরিনারি) জি. এস. নাগ জানিয়েছেন—
“প্রথমে দেশি জাতের কুকুরদের সফলতার হার ছিল ৪০ শতাংশ। এখন তা বেড়ে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশে পৌঁছেছে, এবং আরও বাড়ছে।”
২০২১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫০টি দেশি জাতের কুকুর সফলভাবে প্রশিক্ষিত হয়ে কাজ করছে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য পুলিশ বাহিনীতে। বর্তমানে আরও ২০টিরও বেশি কুকুর প্রশিক্ষণাধীন।
সম্প্রতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে BSF-এর মহিলা মুঢ়োল হাউন্ড ‘রিয়া’। ২০২৪ সালে লখনউ-তে আয়োজিত অল ইন্ডিয়া পুলিশ ডিউটি মিটে রিয়া জিতে নিয়েছে ‘বেস্ট ট্র্যাকার’ ও ‘বেস্ট ডগ অফ দ্য মিট’— দুটি শিরোপাই। ১১৬টি বিদেশি জাতের কুকুরকে পেছনে ফেলে এই সাফল্য গড়েছে দেশি জাতের প্রতিনিধি রিয়া।
রিয়া ও তার সহকর্মী লিলি আগামী ৩১ অক্টোবর গুজরাটের কেভাডিয়ায় অনুষ্ঠিত জাতীয় সংহতি দিবসের প্যারেডে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রদর্শন করবে তাদের কমান্ডো দক্ষতা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতীয় জাতের কুকুরদের মধ্যে রয়েছে স্বাভাবিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা, সহনশীলতা, দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা এবং তুলনামূলকভাবে কম রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন। ফলে দেশের কঠিন ও বহুমুখী জলবায়ুতে তারা বেশি কার্যকর হয়ে উঠছে।
একজন CAPF কুকুর প্রশিক্ষক বলেন—
“এরা বিদেশি জাতের তুলনায় অনেক বেশি শক্ত, সহনশীল ও সহজে অভিযোজিত হয়। পাহাড়, মরুভূমি বা জঙ্গি এলাকায় এদের পারফরম্যান্স অসাধারণ।”
দেশি জাতের কুকুর এখন শুধু নিরাপত্তা নয়, আত্মনির্ভর ভারতের প্রতীকও। তাদের তীক্ষ্ণ ঘ্রাণশক্তি, দ্রুত গতি এবং দৃঢ়তা ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করে তুলছে। হেলিকপ্টার থেকে নামা হোক বা গঙ্গার স্রোতে র্যাফটিং— ভারতীয় জাতের এই কুকুররাই হয়ে উঠছে ভারতের নতুন গর্ব।




