কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব সংবাদদাতা :কলকাতা :২৩ অক্টোবর
পাহাড়, নদী ও চা-বাগানের রাজ্য উত্তরবঙ্গে এবার খুলে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক সংযোগের নতুন দুয়ার। প্রথমবারের মতো রেলপথে সরাসরি যুক্ত হতে চলেছে ভারত ও ভুটান। আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের উদ্যোগে ইতিমধ্যেই এই ঐতিহাসিক প্রকল্পে বড় পদক্ষেপ নিয়েছে ভারতীয় রেল।
বুধবার এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প নিয়ে সুখবর শোনালেন আলিপুরদুয়ার রেল ডিভিশনের ডিআরএম দেবেন্দ্র সিং। তাঁর কথায়, প্রতিবেশী ভুটানকে রেলপথে জোড়ার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। ইতিমধ্যেই দুটি রেল করিডর তৈরির জন্য রেল বোর্ড থেকে মোট ৪০৩৩ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে।
ভারতীয় রেলের পরিকল্পনা অনুযায়ী, দুটি রুটে ভুটানের সঙ্গে রেলপথ তৈরি হবে—
১ অসমের কোকরাঝাড় থেকে ভুটানের গ্যালিফু পর্যন্ত ৬৯ কিলোমিটার রেলপথ,
২ জলপাইগুড়ির বানারহাট থেকে ভুটানের সামচে পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার রেলপথ।
ডিআরএম দেবেন্দ্র সিং জানিয়েছেন,
“দুই প্রকল্পের জন্য মোট ৪০৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে রেল বোর্ড। সার্ভে প্রায় শেষ পর্যায়ে, খুব শীঘ্রই রেললাইন পাতার কাজ শুরু হবে।”
শুধু ভুটান সংযোগই নয়, আলিপুরদুয়ার জেলার কামাখ্যাগুড়ি ও বীরপাড়া এলাকাতেও দুটি রেলওয়ে ওভারব্রিজ তৈরির প্রস্তাব রেল বোর্ডের কাছে পাঠানো হয়েছে। এই ওভারব্রিজগুলি তৈরি হলে দুর্ঘটনা রোধ ও যান চলাচল আরও সহজ হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
রেল আধিকারিক আরও জানান, ২০২৭ সালের মধ্যেই শিলিগুড়ির সেবক থেকে সিকিমের রংপো পর্যন্ত নির্মীয়মাণ রেলপথে যাত্রিবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হবে।
প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাহাড়ি পথে থাকবে পাঁচটি স্টেশন — সেবক, রংটং, তিস্তাবাজার, মংপু ও রংপো।
এই রেললাইন চালু হলে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সিকিমের সংযোগ আরও মজবুত হবে, পাশাপাশি পর্যটন ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বহুগুণে বাড়বে।
ডিআরএম দেবেন্দ্র সিং বলেন,
“ভুটানের ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব গ্যালিফুর সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপন হলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নতুন জোয়ার আসবে। সামচেতে ভুটান ইতিমধ্যেই একটি আন্তর্জাতিক মানের শিল্পশহর গড়ার কাজ শুরু করেছে। ভারতীয় রেল মনে করছে, এই প্রকল্প শেষ হলে দুই দেশের মধ্যে সংযোগের নতুন অধ্যায় সূচিত হবে।”
এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ব্যবসায়ী মহল।
আলিপুরদুয়ার চেম্বার অফ কমার্সের সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিৎ দে বলেন,
“রেলের এই পদক্ষেপ যথেষ্ট ইতিবাচক। তবে আগামী ধাপে হাসিমারা থেকে জয়গাঁ হয়ে ফুন্টসোলিং পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ করলে ভারত-ভুটান বাণিজ্য আরও সহজ হবে।”
রেল বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রকল্প সম্পূর্ণ হলে ভারত ও ভুটানের মধ্যে পণ্য পরিবহন, পর্যটন ও সীমান্ত-বাণিজ্যে এক অভূতপূর্ব গতি আসবে। উত্তরবঙ্গ হবে দক্ষিণ এশিয়ার নতুন ট্রানজিট হাব।




