নিজস্ব সংবাদদাতা, মুর্শিদাবাদ:
ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন নিয়ে চলা বিক্ষোভ ও সহিংসতার ঘটনার পর মুর্শিদাবাদ জেলায় পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত এবং নিয়ন্ত্রিত রয়েছে বলে জানিয়েছেন এক শীর্ষ পুলিশ আধিকারিক। মুসলিম-অধ্যুষিত এই জেলায় বুধবার সকাল পর্যন্ত কোনও অশান্তির খবর পাওয়া যায়নি।
সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে রঘুনাথগঞ্জ ও সুতির থানা এলাকার আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে এবং জেলার সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে, বিশেষ করে জঙ্গিপুর শহরের চারপাশে, মোতায়েন রয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। মঙ্গলবার বিকেলে ওই এলাকায় প্রচুর সংখ্যক মানুষ ওয়াকফ আইন প্রত্যাহারের দাবিতে জমায়েত করেছিলেন।
ভুয়ো খবর রুখতে ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত
জঙ্গিপুর মহকুমার অন্তর্গত এলাকাগুলিতে ভুয়ো তথ্য ছড়িয়ে পড়া রুখতে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা আগামী ১১ এপ্রিল (শুক্রবার) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
এক পুলিশ আধিকারিক জানান, “বর্তমানে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ শান্ত ও নিয়ন্ত্রণে। কোনও নতুন অশান্তির ঘটনা ঘটেনি। ১৪৪ ধারা ১০ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।”
মঙ্গলবারের ঘটনার বিবরণ
মঙ্গলবার দুপুরে জঙ্গিপুরের NH-12-এ বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ওপর পাথর ছোঁড়ে। পুলিশের একাধিক গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাসের শেল ব্যবহার করে। এই ঘটনায় কয়েকজন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশ বেশ কয়েকজনকে আটকও করেছে বলে জানা গিয়েছে।
রাজ্যপালের প্রতিক্রিয়া ও বিজেপির আক্রমণ
রাজ্যের রাজ্যপাল সি.ভি. আনন্দ বোস এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন এবং বলেছেন, “আইন-শৃঙ্খলা ভাঙার যে কোনও প্রচেষ্টাকে কঠোর হাতে দমন করা উচিত।” তিনি রাজ্য সরকারকে সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ও রিপোর্ট চেয়েছেন।
এদিকে, বিরোধী বিজেপি অভিযোগ করেছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংখ্যালঘু তোষণের রাজনীতির জেরে রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “যে পশ্চিমবঙ্গ একদা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির হাত ধরে রক্ষা পেয়েছিল, তা আজ মমতার শাসনে রক্তাক্ত।”
ওয়াকফ সংশোধনী আইন কী?
ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল লোকসভায় পাস হয় বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার ভোরে রাজ্যসভায় দীর্ঘ বিতর্কের পর গৃহীত হয়। শনিবার রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু বিলটিতে সই করেন।
এই আইন ওয়াকফ সম্পত্তির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, ঐতিহ্য রক্ষার পাশাপাশি সামাজিক কল্যাণে ব্যবহারের লক্ষ্যে প্রণীত। এছাড়া স্বচ্ছতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ওয়াকফ বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় সাধনেরও চেষ্টা করা হয়েছে।