কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :নিজস্ব সংবাদদাতা
নতুন কেন্দ্রীয় ওয়াকফ আইন নিয়ে ছড়ানো উত্তেজনার মধ্যে শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, পশ্চিমবঙ্গে এই আইন কার্যকর হবে না। মুর্শিদাবাদে শুক্রবার জুমার নামাজের পর অশান্তি ও হিংসার ঘটনার পর দিন, মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের অবস্থান তুলে ধরে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানান।
মুর্শিদাবাদের বেশ কয়েকটি এলাকায় শুক্রবার জুমার নামাজের পরে হঠাৎ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন পুলিশকর্মী আহত হন। ভাঙচুর করা হয় একাধিক সরকারি স্থাপনা—পুলিশ আউটপোস্ট, রেলওয়ে অফিস, দোকানপাট। এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতেই মুখ্যমন্ত্রী টুইটারে (বর্তমানে ‘X’) পোস্ট করে বলেন,
“আমরা ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছি যে এই আইন আমরা সমর্থন করি না। এই আইন আমাদের রাজ্যে কার্যকর হবে না। তাহলে এই হিংসার কারণ কী?”
তিনি আরও বলেন, “আমার সমস্ত ধর্মের মানুষের কাছে আন্তরিক আবেদন, শান্ত থাকুন, সংযত থাকুন। ধর্মের নামে অন্যায় কাজে জড়াবেন না। প্রতিটি মানুষের জীবনই মূল্যবান। রাজনীতির স্বার্থে দাঙ্গা বাধাবেন না। যারা দাঙ্গা বাধাচ্ছে, তারা সমাজের ক্ষতি করছে।”
অন্যদিকে রাজ্যের ডিজি রাজীব কুমার জানান, Friday-র হিংসা ছড়ানোর পেছনে গুজবের বড় ভূমিকা ছিল। তিনি বলেন, “অসত্য তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার ফলে মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছে, এবং তার ফলে এই হিংসাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যদিও আমরা বারবার জানিয়েছি, রাজ্য সরকার এই কেন্দ্রীয় আইন কার্যকর করেনি।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করিয়ে দেন যে ওয়াকফ আইন কেন্দ্র সরকার পাস করেছে, রাজ্য সরকার নয়। তাঁর মন্তব্য, “এই আইন রাজ্যের নয়। এর জন্য জবাবদিহি চাইতে হলে, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছেই যান।” পাশাপাশি, তিনি হুঁশিয়ারি দেন, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে হিংসা ছড়ানোর চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, “কিছু রাজনৈতিক দল ধর্মকে ব্যবহার করে ভোটের আগে রাজ্যকে উত্তপ্ত করতে চাইছে। তাদের ফাঁদে পা দেবেন না। ধর্মের নামে বিভেদ ছড়ানো রাজনৈতিক অভিসন্ধি।”
জম্মু-কাশ্মীরের পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি সম্প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম.কে. স্টালিন ও কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াকে চিঠি লিখে অনুরোধ করেছেন, যাতে তাঁরা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ ও সংবিধানিক কাঠামোর উপর আঘাতকারী নীতির বিরোধিতা অব্যাহত রাখেন।
রাজ্য সরকারের এই অবস্থান ও মুখ্যমন্ত্রীর সরাসরি বার্তা রাজ্যের সাম্প্রতিক উত্তেজনাপূর্ণ আবহে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে, পরবর্তী সময়ে এই ইস্যুতে কেন্দ্র ও রাজ্যের টানাপোড়েন কোন দিকে গড়ায়, সেদিকে তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।