কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :নিজস্ব সংবাদদাতা:
সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজ্য রাজনীতি। ঘটনায় নিহত হন জাফরাবাদের বাসিন্দা হরগোবিন্দ দাস ও তাঁর পুত্র, যাঁদের কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার দায় রাজনৈতিক পাল্টাপাল্টি অভিযোগে ঘনীভূত হয়েছে, আর সেই সূত্র ধরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তীব্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পেয়েছে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে।
বুধবার, কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ইমাম ও ধর্মীয় নেতাদের এক সভায় মমতা বলেন, “মুর্শিদাবাদের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা পূর্বপরিকল্পিত। এর পেছনে রয়েছে বিএসএফ-এর একাংশ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ কিছু সংস্থা এবং বিজেপি। বাংলাদেশ থেকে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে রাজ্যে অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হয়েছে।”
তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আহ্বান জানান, যেন বিতর্কিত ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন কার্যকর না করা হয়। তাঁর ভাষায়, “এই আইন দেশকে বিভক্ত করতে পারে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ দেশের সবচেয়ে ক্ষতি করছেন নিজের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে গিয়ে।”
মুখ্যমন্ত্রীর আরও প্রশ্ন, “যদি সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশ ঘটে, তাহলে বিএসএফ কী করছে? তারা তো কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে। আন্তর্জাতিক সীমান্ত পাহারা দেওয়া রাজ্য সরকারের দায়িত্ব নয়। তাহলে কেন্দ্র নিজের দায় কীভাবে এড়িয়ে যেতে পারে?”
অন্যদিকে সাম্প্রতিক হিংসায় নিহত হরগোবিন্দ দাস ও তাঁর পুত্রের পরিবার মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা করা ১০ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ নিতে অস্বীকার করেছে। পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ও দেরিতে প্রতিক্রিয়া জানানো তাঁদের আপনজনদের প্রাণহানির জন্য দায়ী।
তাঁদের বক্তব্য, “মনে হচ্ছে প্রশাসন রাজনৈতিক সংবেদনশীলতা নিয়ে যতটা চিন্তিত, মানুষের জীবনরক্ষার বিষয়ে ততটা নয়।”
অপরদিকে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ মঙ্গলবার বলেন, “বাংলা জ্বলছে” এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হিংসা নিয়ে চুপ থাকছেন। তিনি হিংসার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের পক্ষে সওয়াল করে বলেন, “লাতোও কে ভূত বাতো সে কাহা মানতে হায় ”
এর জবাবে মমতা বলেন, “উনি বড় বড় কথা বলছেন, কিন্তু আসলে তিনিই সবচেয়ে বড় ‘ভোগী’ । উত্তরপ্রদেশে কত মানুষ মারা যায় পুলিশ এনকাউন্টারে, কতজন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ হারান, তার সঠিক পরিসংখ্যান দেন কি? সেখানে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করাও যায় না। বাংলায় মানুষ স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারে।”
তিনি আরো বলেন , “যিনি নিজে আধ্যাত্মিকতার মুখোশ পরে আছেন, তিনি আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বড় কথা বলছেন— এটাই পরিহাস!”
এই ঘটনার পটভূমিতে রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে দায়বদ্ধতা নিয়ে টানাপোড়েন আরও স্পষ্ট হয়েছে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্র দাবি করছে, রাজ্য সরকার হিংসা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ; অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস বলছে, কেন্দ্র ইচ্ছাকৃতভাবে অশান্তি উসকে দিচ্ছে, বিশেষত নির্বাচনের প্রাক্কালে।
ওয়াকফ আইন নিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের একাংশের অসন্তোষের মাঝে এমন উত্তেজনা রাজনৈতিক মেরুকরণ ও ধর্মীয় উত্তেজনার রাজনীতিকে সামনে নিয়ে এসেছে।
মুর্শিদাবাদের এই সহিংসতা এখন শুধু একটি আইনশৃঙ্খলার ইস্যু নয়, একটি বড় রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। এতে যেমন প্রশাসনের প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়ার বাস্তবতা উঠে এসেছে, তেমনই স্পষ্ট হয়েছে ধর্মীয় ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির জটিলতা।
জনগণ চাইছে স্বচ্ছ তদন্ত, ন্যায়বিচার এবং রাজনৈতিক রেষারেষার ঊর্ধ্বে উঠে সঠিক পদক্ষেপ।