spot_img
35 C
Kolkata
Friday, May 9, 2025
spot_img

চাকরি নেই, আশা নেই—আছেই শুধু লড়াই : এসএসসি ঘিরে রাতভর শিক্ষক-আন্দোলনের গর্জন

কলকাতা টাইমস নিউজ  :নিজস্ব প্রতিবেদন:

রাত তখন প্রায় ১২টা। শহর ঘুমিয়ে পড়লেও জেগে ছিল আচার্য সদনের সামনে এক ঝাঁক চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকা। হাতে প্ল্যাকার্ড, মুখে ক্ষোভ। কেউ গলা ফাটিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন, কেউ আবার ফাঁকা বোতল বাজিয়ে ধ্বনি তুলছেন— “চোর এসএসসি, চোর সরকার!”

সোমবার সন্ধ্যা থেকেই জমায়েত বাড়ছিল। কলকাতার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে হাজির হচ্ছিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকা, যাঁদের নিয়োগের স্বপ্ন এক এক করে চুরমার হয়েছে। রাত গড়াতেই সেই জমায়েত রূপ নেয় উগ্র প্রতিবাদে। এসএসসি ভবনের ভিতরে তখন চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার আলোচনায় ব্যস্ত। বাইরে তখন শিক্ষক-শিক্ষিকারা রাস্তায় বসে পড়েছেন, ঘেরাও চলছে।

প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এসএসসি চেয়ারম্যানের বৈঠকের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে খবর— তৃতীয় কাউন্সেলিং পর্যন্ত যাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁরাই যোগ্য বলে ধরা হবে।
এই খবরেই যেন মঞ্চে ওঠে বিস্ফোরণ!
চতুর্থ কাউন্সেলিং-এর শিক্ষকরা বলেন, “আমরা কি তবে বাতিল?”— সেই প্রশ্নে প্রতিবাদ আরও জোরালো হয়।

চিন্ময় মণ্ডল, ‘যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’-র পক্ষে জানিয়ে দেন, “আচার্য সদন ঘেরাও চলবে যতক্ষণ না পর্যন্ত নিরপেক্ষ তালিকা প্রকাশ করা হয়।”

রাত যত গভীর হয়েছে, তত বেড়েছে প্রতিবাদের তীব্রতা। একজন আন্দোলনকারী বললেন, “কেউ কেউ চাকরি ফিরে পেয়েছেন। কেউ কেউ এখনও অন্ধকারে। এসএসসি আমাদের লড়াইকে ভাগ করে দিচ্ছে। এটা আমরা মেনে নেব না।”

অন্যদিকে এসএসসি-র মধ্যরাতের বিবৃতি ছিল নির্লিপ্ত ও নিরাসক্ত—“সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই নিয়োগ হবে। যাঁরা স্কুলে যাচ্ছেন, বেতনও পাবেন নিয়মমাফিক।”এই বিবৃতি যেন আরও ক্ষুব্ধ করে তোলে চাকরিহারাদের। কারণ তাঁদের দাবি, সুপ্রিম কোর্ট তো কখনও স্পষ্ট ‘যোগ্যতা তালিকা’ প্রকাশে নিষেধ করেনি!

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সংবাদমাধ্যমে বলেন, “যোগ্য-অযোগ্য তালিকা প্রকাশের কথা সুপ্রিম কোর্টের আদেশে নেই। করলে আইনি জট তৈরি হতে পারে।”
তাঁর এই বক্তব্য আন্দোলনকারীদের প্রশ্নের মুখে ফেলে— তাহলে স্বচ্ছতা কোথায়?

মঙ্গলবার বিকেল ৪টের মধ্যে আন্দোলনকারীরা বৈঠকে বসবেন, সিদ্ধান্ত হবে পরবর্তী কর্মসূচির। তালিকা প্রকাশে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হতে পারে, না হলে রাজ্যজুড়ে কর্মসূচির প্রস্তুতি রয়েছে।

একজন আন্দোলনকারী শিক্ষক বললেন—”বাচ্চারা আমাদের ‘স্যার’ বলে ডাকে। কিন্তু সরকার আমাদের চোর বানিয়ে দিল। আমাদের লড়াই বাঁচার লড়াই।”

অন্যদিকে রাত শেষ হলেও থামেনি আন্দোলন। পুলিশ পাহারার ঘেরাটোপে থাকা আচার্য সদনের সামনে মঙ্গলবারও চলছে জমায়েত।তাঁদের কণ্ঠে এখন শুধু একটাই কথা—
“যদি আমরা পিছিয়ে যাই, তাহলে সত্যি মরে যাব। তাই এবার রাজ্য তোলপাড় হবেই।”

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,300SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles

Enable Notifications Thank You No thanks