কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব সংবাদদাতা :
রাতের নিস্তব্ধতা হঠাৎই চিৎকারে ফেটে পড়ে—“আগুন! কেউ বাঁচাও!”
দগ্ধ শরীর নিয়ে মেঝেতে ছটফট করছিল বছর উনিশের অন্তঃসত্ত্বা নমিতা বসাক। পাশে পড়ে ছিল তার সাত বছরের ভাই, শরীরের একাংশ পোড়া। কেউ ভাবেনি, এই বিভীষিকাময় ঘটনার নেপথ্যে রক্তের সম্পর্কই হবে সবচেয়ে বড় শত্রু।
আর সেই শত্রুই নমিতার মা’র মামা—স্বপন বসাক, অর্থাৎ নমিতার ‘দাদু’। যিনি এখন পুলিস হেফাজতে, হত্যার অভিযোগে।
নমিতা মায়ের সঙ্গেই থাকতেন নেতাজি নগরের শ্রী কলোনিতে। বাড়ির পুরুষদের মধ্যে স্বপন ছিলেন নিয়মিত—তবে তিক্ততা ও হিংস্র ব্যবহার ছিল তাঁর স্বভাব। মায়ের সঙ্গে বচসা লেগেই থাকত।
সেই অবিচারের প্রতিবাদ করেছিল নমিতা—এটাই তার ‘অপরাধ’।
আর সেই অপরাধের ‘শাস্তি’ মেটাতে গিয়ে নিজেই আগুন ধরিয়ে দিলেন তরুণীর শরীরে—নির্দয়, অমানবিক, রক্ত হিম করা অপরাধ।
১০ এপ্রিল দুপুর ১টার কিছু আগে হঠাৎ ধোঁয়া বের হতে দেখা যায় নমিতার ঘর থেকে।
পুলিশ সূত্র জানাচ্ছে, গ্যাস সিলিন্ডার খোলা অবস্থায় রাখা ছিল। আগুন ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তে। দগ্ধ অবস্থায় নমিতাকে উদ্ধার করে বাঘাযতীন হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করা হয়।
ময়নাতদন্তে জানা যায়—মাথায় ইন্টারনাল হেমারেজ ছিল, দেহ ১০০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ আগুনের আগেই মাথায় আঘাত করা হয়েছিল—অবচেতন করার উদ্দেশ্যে।
বাড়ির সামনে খেলা করছিল নমিতার সাত বছরের ভাই শিবা। দিদিকে বাঁচাতে ছুটে যায় ঘরের ভিতর। কিন্তু পুড়ে যায় সেও—এই বয়সেই চোখের সামনে দেখা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দৃশ্য তার স্মৃতির অংশ হয়ে থাকবে আজীবন।
ঘটনার পরে গা ঢাকা দেয় স্বপন। কিন্তু তদন্তকারীরা বসে থাকেননি।
সিসিটিভি ফুটেজ, মোবাইল টাওয়ার ডেটা ঘেঁটে জানতে পারেন—স্বপন গা ঢাকা দিয়েছে রায়গঞ্জে। খবর মেলে, সে নেপাল পালাতে চাইছিল।
পুলিশের বিশেষ দল রায়গঞ্জে অভিযান চালিয়ে রবিবার রাতে গ্রেপ্তার করে স্বপনকে।
পুলিশি জেরায় স্বপন জানায়—নমিতাকে দেওয়ালে মাথা ঠুকিয়ে অজ্ঞান করে, তারপর আগুন লাগায়। এমনকি তার পরবর্তী লক্ষ্য ছিল নমিতার মা, অর্থাৎ নিজের ভাগ্নি—যাঁর সঙ্গেই তাঁর পুরনো অশান্তি ছিল।
এই ঘটনার পেছনে আরও কেউ জড়িত কিনা, কীভাবে এমন নির্মম পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হল—তা খতিয়ে দেখছে লালবাজারের বিশেষ তদন্তকারী দল। স্বপনের পেশা অটোচালক হলেও, তার গতিবিধি, সম্পত্তি ও যোগাযোগপত্র ঘিরেও প্রশ্ন উঠছে।