কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব প্রতিবেদন :
দেবজিৎ গাঙ্গুলী :
শেষবারের মতো স্ত্রী আর আড়াই বছরের ছেলেকে নিয়ে পাহাড়ে পা রেখেছিলেন বিতান অধিকারী। কাশ্মীরের শোভা দেখতে এসেছিলেন, মন ভরিয়ে ফিরবেন—এই আশায়। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস—ফেরার পথ রইল না। বাইসারানের সেই রক্তাক্ত দুপুরে স্তব্ধ হয়ে গেল তাঁর জীবনের সফর। জঙ্গিদের এলোপাথাড়ি গুলিতে প্রাণ হারালেন ফ্লরিডা প্রবাসী এই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার।
চারদিক তখন আতঙ্কে থমথমে, দিশাহীন ভয়ে ছুটছে মানুষ। ঠিক সেই সময় পাহাড়ি ট্রেল ধরে চলছিল বিতানদের ট্যুর গাড়ি। স্ত্রীর হাত ধরে ছিলেন তিনি, পাশে ছোট্ট ঋদান। কিন্তু সেদিন ঘাতকরা তাক করেছিল শুধুই পুরুষদের দিকে। স্ত্রী আর শিশুকে দূরে সরিয়ে রেখে একের পর এক গুলি করা হয় পর্যটকদের। সেখানেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন বিতান।
ঘটনার সময় গাড়ির চালক আকাব মালিক ছিলেন সম্পূর্ণ হতবাক। ফোনে যোগাযোগ করা হলে বলেন, আমি এখন মানসিকভাবে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত। পরিবারটির পাশে থাকাই এখন আমার একমাত্র কর্তব্য।
বেহালার বৈশালী পার্কে বিতানদের পরিবার আজ নিঃশব্দ শোকস্তব্ধ। স্ত্রী সোহিনী আজও বিশ্বাস করতে পারছেন না—চার বছরের সংসার, সুখের প্রবাসজীবন, ছেলেকে নিয়ে নতুন করে গড়তে চাওয়া ভবিষ্যৎ—সব ভেঙে গেল এক মুহূর্তে। সোহিনীর কাঁধেই এখন সন্তানকে নিয়ে শহরে ফেরার ভার।
বিতানের মামাতো ভাই দীপক চক্রবর্তী যিনি ছোট ঋদানকে আগলে রাখতেন, আজ ক্রমাগত বলছেন, “আমার বাবাটা কিছু খায়নি। আমি কিছু খেতে পারব না।” পরিবারের অন্য প্রান্তে, বেহালার বাড়িতে রয়েছেন বিতানের বৃদ্ধ বাবা-মা। বাবার বুকে কিছুদিন আগেই বসেছে পেসমেকার। এখনও তাঁরা জানেন না, তাঁদের ছেলের দেহ ফিরছে কাফনে মোড়া হয়ে।
বুধবার সকালে বৈষ্ণবঘাটার সেই নিঃশব্দ বাড়িতে হাজির হন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোহিনীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। সবরকম সাহায্যের আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।
এই মুহূর্তে বিতানের দেহ রাখা আছে শ্রীনগরের হাসপাতালে। ময়নাতদন্তের পরে বুধবার অথবা বৃহস্পতিবার ফিরিয়ে আনা হবে দেহ। সম্ভবত সেই একই উড়ানে ফিরবেন সোহিনী ও ঋদান—স্বামীর মরদেহ নিয়ে, মাথাভারি শোক নিয়ে, এবং সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখার দায় নিয়ে।
কাশ্মীরের রক্তাক্ত আকাশ আজ শুধু পাহাড় নয়, ভেঙে দিয়েছে বহু ঘরের আশার আলো। বিতান ছিলেন তাদেরই একজন—যাঁর গল্প হয়তো শহরের হাজারো মানুষের জীবনের প্রতিচ্ছবি। কিন্তু তাঁর শেষ যাত্রা হয়ে রইল নিঃশব্দ, অসমাপ্ত।