পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলার পর উপমহাদেশের রাজনৈতিক উত্তাপ চরমে। এরই মধ্যে শুক্রবার দিল্লিতে সাংবাদিকদের সামনে দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী সি আর পাতিল — “ভারতের একফোঁটা জলও পাকিস্তানের দিকে যাবে না।”
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ভারতের নদীগুলির জল যাতে পাকিস্তানের দিকে না যায়, তার জন্য কেন্দ্র একটি বিস্তৃত রোডম্যাপ তৈরি করেছে। পরিকল্পনায় রয়েছে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি নানা পদক্ষেপ। এর মধ্যে প্রথম দফায় নদীগুলির পলি অপসারণ (ডিসিল্টিং) শুরু হবে, যাতে জলের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে দেশের অভ্যন্তরে তা কাজে লাগানো যায়।
মন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তিনটি বিকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে। লক্ষ্য একটাই — পাকিস্তানে একফোঁটাও জল যেন না যায়।”
পহেলগাঁও সন্ত্রাসী আক্রমণের পর এই সিদ্ধান্ত সামনে এসেছে। এই হামলার পরে ভারতের অভ্যন্তরে ক্ষোভ ও নিরাপত্তা উদ্বেগ দুই-ই বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা পুনরায় ইন্দাস জলচুক্তির (Indus Water Treaty, ১৯৬০) তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “এই চুক্তি জম্মু ও কাশ্মীরবাসীর জন্য সবচেয়ে অন্যায্য দলিল। ভারত সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু কাশ্মীরের মানুষ বরাবর এই চুক্তিকে নিজেদের প্রতি অবিচার মনে করে এসেছে।”
ওমর আবদুল্লা আরও জানান, দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তিনি কাশ্মীরি জনগণের সুরক্ষার বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। অমিত শাহ আশ্বাস দিয়েছেন, দেশের অন্য রাজ্যগুলিতে বসবাসকারী কাশ্মীরিদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি, এই বিষয়ে একটি বিশেষ অ্যাডভাইসরি জারি করা হবে বলেও জানান তিনি।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটি (CCS) সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, পাকিস্তানের সঙ্গে ইন্দাস জলচুক্তি স্থগিত থাকবে, যতক্ষণ না পাকিস্তান সীমান্তপারে সন্ত্রাসে মদত দেওয়া বন্ধ করে এবং ভারতের আক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়। সেই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতেই এবার নদীজলের প্রবাহ সম্পূর্ণ বন্ধে আরও কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে দিল্লি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের নদীজল সম্পদ শুধু কৃষি, শিল্প বা জনজীবনের জন্য নয়, কূটনৈতিক চাপ তৈরিরও বড় হাতিয়ার হতে পারে। পাকিস্তানের প্রতি ভারত যে বার্তা দিতে চাইছে — তা স্পষ্ট: “সন্ত্রাসের মদত চলবে না আর ভারতের সম্পদও বিনা বাধায় প্রবাহিত হবে না।”
উপমহাদেশের বর্তমান ভূরাজনৈতিক আবহে এই সিদ্ধান্ত এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে বলেই ধারণা।