কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :
দুপুরের রোদে ছাগল চরানো, মাথায় গাঁধী টুপি, কাঁধে চটের চাদর, হাতে লাঠি আর পায়ে বিশাল স্যান্ডেল—এই ছবিটা ছিল বীরুদেব সিদ্দাপ্পা ধোনের ছোটবেলার পরিচয়। আর আজ? ওই ছেলেই দেশের অন্যতম কঠিন পরীক্ষায় প্রথম চেষ্টায় পাশ করে বসে আছেন আইপিএস অফিসারের পদে!
মহারাষ্ট্রের কোলহাপুর জেলার কাগল তালুকের একটি ছোট্ট গ্রাম ইয়ামগে থেকে উঠে আসা বীরুদেব এবার সারা রাজ্যের গর্ব। ৫৫১তম র্যাঙ্ক নিয়ে ইউপিএসসি-তে সফল হয়েছেন তিনি।
ব্যক্তিগত এক ঘটনার অভিঘাতেই জন্ম নেয় এই স্বপ্ন। যখন থানায় গিয়ে সাহায্য পাননি, সেই অপমানই জেদে পরিণত হয়। প্রতিজ্ঞা করেছিলেন—পুলিশের ইউনিফর্ম পরে একদিন নিজেই এমন অফিসার হবেন, যিনি গরিবদের দোরগোড়ায় ন্যায় পৌঁছে দেবেন।তাঁর এই দৃঢ়তা তাঁকে পৌঁছে দেয় দিল্লির ইউপিএসসি কোচিং ক্লাসে। দিনে ২২ ঘণ্টা পড়াশোনা করে অবশেষে সেই স্বপ্ন আজ বাস্তব।
বীরুদেবের পরিবারে বাবা, মা, বিবাহিত দিদি ও ভাই। শিক্ষার সুযোগ কম ছিল। তাঁর বাবা সিদ্দাপ্পা ধোনে দ্বাদশ শ্রেণির পর ছাগল চরানো শুরু করেন। মা একেবারেই নিরক্ষর। তবে ছেলের সাফল্য বুঝতে না পারলেও, তাঁর চোখের আনন্দ যেন সমস্ত ভাষাকে ছাড়িয়ে গেল।
খবরে আসার পর, গ্রামে যেন উৎসবের আমেজ। পাশের গ্রাম থেকে ছুটে এসে বন্ধু জানাল, “তোর নাম র্যাঙ্কে এসেছে!” —আর সেই থেকেই বদলে যেতে শুরু করল সব।
দশম ও দ্বাদশ শ্রেণিতে কাগল তালুকের মুরগুড সেন্টারে প্রথম সারির ফল করে নজর কেড়েছিলেন আগেই। এরপর ভর্তি হন পুণের SIOP ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। কিন্তু তাঁর লক্ষ্য ছিল অন্য। অফিসার হওয়া।
দিল্লিতে প্রস্তুতির সময় মাসে ১০-১২ হাজার টাকা পাঠাতেন বাবা। পরিবারে টাকা-পয়সার টানাটানি থাকা সত্ত্বেও, ছেলের স্বপ্নে ছেদ পড়তে দেননি তাঁরা।
২৭ বছর বয়সে প্রথম চেষ্টায় আইপিএস হয়ে উঠেছেন মহারাষ্ট্রের কাগল তালুকের প্রথম ইউপিএসসি পাস করা ব্যক্তি। আজ বীরুদেব শুধু একটি নাম নয়, গ্রামীণ ভারতের কোটি কোটি স্বপ্নদ্রষ্টার প্রতিচ্ছবি।
তিনি প্রমাণ করলেন—লাঠি হাতে ছাগল চরানো ছেলেও পারে দেশের আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্ব নিতে। পার্থক্য শুধু একটিই—স্বপ্ন দেখা ও ত্যাগ স্বীকারের সাহস।