কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :নিজস্ব প্রতিবেদন:
পশ্চিমবঙ্গের দিঘায় নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দিরের নামকরণ ঘিরে এবার সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিতর্ক। মন্দিরের নাম ‘জগন্নাথ ধাম’ হওয়ায় কড়া আপত্তি তুলেছে উড়িষ্যার সরকার ও জগন্নাথ উপাসক মহল। তাদের দাবি, পুরীর জগন্নাথ ধামই শ্রেষ্ঠ ও আদিতম তীর্থক্ষেত্র—এই নামে অন্যত্র মন্দির নির্মাণ করা “ওড়িয়া আবেগে আঘাত।”
উড়িষ্যার আইনমন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা পৃথ্বীরাজ হরিচন্দন সোমবার পুরীর শ্রীজগন্নাথ মন্দির প্রশাসনের প্রধান আরবিন্দ পদীকে চিঠি লিখে তিনটি বিষয়ে তদন্ত চেয়েছেন—
১) দিঘার মন্দিরের নামকরণ ‘জগন্নাথ ধাম’ কেন করা হল
২) পুরীর সেবায়েতরা ওই প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে কীভাবে অংশ নিলেন
৩) ‘দারু কথা’-র মতো পবিত্র রীতির প্রয়োগ কীভাবে হল, যা শুধুমাত্র পুরীর জন্য নির্দিষ্ট
এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া আবেগঘন বার্তা যেন আগুনে ঘি ঢেলে দেয়। তিনি লেখেন, “জগন্নাথ মন্দিরে আজ প্রথমবার প্রবেশের সেই অনুভব চিরস্মরণীয়… ঈশ্বরের আশীর্বাদ আমাদের মা-মাটি-মানুষের সঙ্গে থাকুক।”
এই পোস্টের পরপরই উড়িষ্যা জুড়ে শুরু হয় বিতর্কের ঝড়। বিজেপি নেতারা অভিযোগ তোলেন, তৃণমূল নেত্রী ধর্মীয় ভাবাবেগকে রাজনৈতিক প্রচারের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন।
“একদিকে হিন্দুদের রক্ষা করতে ব্যর্থ, অন্যদিকে ভোটের মুখে মন্দির গড়ছেন! দিঘার মন্দিরে সরকারী অর্থ কেন?”— প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি-র পশ্চিমবঙ্গ সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার।
অন্যদিকে, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের প্রবীণ সেবায়েত রামকৃষ্ণ দাস মহাপাত্র শান্তির বার্তা দিয়ে বলেন, “মন্দির নির্মাণ মহৎ কাজ। জগন্নাথ বিশ্বজোড়া দেবতা। তবে পুরীর ধর্ম গুরুত্ব সর্বোচ্চ—সে স্বীকৃত হওয়া জরুরি।”
বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষও এই বিতর্কে মন্তব্য করে বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নামকরণে কখনো ভাবেন না। তিনি আগে ‘জয় বাংলা’ বলেও সমালোচিত হয়েছিলেন। এখন আবার জগন্নাথ ধাম নিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি করেছেন।”
দিঘার এই মন্দির ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’ অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরাসরি অংশগ্রহণ, আর মন্দিরের নাম ‘ধাম’ হওয়ায় এটি শুধু ধর্মীয় নয়, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার রূপও নিচ্ছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তবে এই বিতর্কের মাঝে সাধারণ ভক্তমহলে প্রশ্ন উঠেছে—জগন্নাথ কি শুধুই উড়িষ্যার? না কি তাঁর আরাধনা সর্বত্রই স্বাগত হওয়া উচিত?