কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :নিজস্ব প্রতিনিধি:
শত্রু হামলা হলে আলো নিভিয়ে লুকিয়ে পড়ার যুগ কি আবার ফিরে এল? ৬৩ বছর পরে ফের সেই চিত্রই দেখা যাবে দেশের ২৪৪টি জেলায়। কিন্তু এবার আতঙ্ক ছড়াতে নয়, বরং বিপদের সময়ে কীভাবে বাঁচতে হবে—তা শেখাতেই এই মহড়া।
চিনের আগ্রাসনের সময় ১৯৬২ সালে প্রথমবার দেশজুড়ে আলো নিভিয়ে মহড়া হয়েছিল। ১৯৭১-এর ভারত-পাক যুদ্ধেও রাতের অন্ধকারে সাইরেন বাজত, গৃহস্থের আলো নিভিয়ে দেওয়ার নির্দেশ মিলত। সেই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটেই আবারও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে মক ড্রিল-এর নির্দেশ—যাতে মানুষ হামলার সময় আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে শিখে নেয়।
বুধবার থেকেই শুরু হচ্ছে মহড়া, নির্দেশ ২৪৪ জেলায়। আজ, মঙ্গলবার জানানো হবে কোন কোন জেলায় এই মহড়া হবে। তার আগেই কেন্দ্র জানিয়ে দিল, বুধবার থেকেই দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সিভিল ডিফেন্স বিভাগের অধীনে যুদ্ধকালীন মক ড্রিল শুরু হবে। শেখানো হবে, শত্রু যুদ্ধবিমান হানা দিলে কীভাবে আত্মরক্ষা করবেন সাধারণ মানুষ। অন্ধকার (ব্ল্যাক আউট) পরিস্থিতিতেও কীভাবে সচল থাকবেন, সেই কৌশল।
পহেলগামের হামলার ১৩ দিন পরে গোয়েন্দা ইনপুট এসেছে, আগামী সপ্তাহেই বড়সড় হামলার ছক কষছে জঙ্গিরা। সেই সতর্কতা মাথায় রেখেই বাড়ানো হয়েছে কাশ্মীরের জেলগুলির নিরাপত্তা। জম্মু-কাশ্মীরের পুঞ্চে পাওয়া গেছে পাঁচটি এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস, ওয়্যারলেস সেট ও কম্বল। সেনা সূত্রের দাবি, বড়সড় নাশকতার ছক ছিল ওখানে।
পাকিস্তান সীমান্ত থেকেও চুপিসারে ভারতীয় ওয়েবসাইটে সাইবার হামলার চেষ্টা হয়েছে সোমবার। যদিও সেনা জানিয়েছে, কোনও চেষ্টাই সফল হয়নি। রবিবার রাতেও পুঞ্চ, কুপওয়াড়া, বারামুল্লা, রাজৌরি—সহ বিভিন্ন সীমান্তে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গুলি চালায় পাক সেনা।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল—সোমবার বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে। সেখানে একমত হয়ে সিদ্ধান্ত হয়, মক ড্রিলের উদ্দেশ্য জনসাধারণকে আতঙ্কিত করা নয়, বরং প্রস্তুত রাখা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “করোনার বিরুদ্ধে লড়াই যেমন ছিল মহামারীর যুদ্ধ, এবার লড়াই সন্ত্রাসবাদকে আশ্রয় দেওয়া শক্তির বিরুদ্ধে। উভয় ক্ষেত্রেই প্রস্তুতি অপরিহার্য।”
১৯৬২ সালে প্রথমবার অসম ও মেঘালয়ে এই ধরনের মক ড্রিল হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭১-এ হয়নি। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, তখন এই প্রস্তুতির অভাবেই একাধিক ক্ষেত্রে অসুবিধায় পড়েছিল দেশ। এবার সেই ভুল পুনরাবৃত্তি হতে দেবে না সরকার।
সুতরাং, আতঙ্ক নয়—চোখে চোখ রেখে বিপদকে মোকাবিলা করতে শিখতে হবে। আর তার প্রথম পাঠ শুরু হচ্ছে কাল থেকেই।